সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আবার তোরা মানুষ হ


আ ব দু ল হা ই শি ক দা র

‘তোমার চোখের মতো স্নিগ্ধ চোখ পৃথিবীতে নেই,
এবং কোন মাতা এমন সুন্দর পুত্র
আর প্রসব করেনি এই পৃথিবীর বুকে’
—কবি হাসান বিন সাবিত।
[রসুলের সাহাবী]

‘বালাগাল উলা বে কামালিহি

কাশাফাদুজা বে জামালিহি
হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি’
—শেখ সা’দী।

‘পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়,

রূপ-কাঠের নৌকা খানি
নাহি ডোবার ভয়।

নবী না চেনে যারা

মুয়াহেদ কাফের তারা এই দুনিয়ায়
ভজনে তার তাই মজুরী
দলিলে সাফ দেখা যায়।’
—লালন ফকির।

‘দেখ ঐ গিরি প্রস্রবণ আনন্দে উজ্জ্বল

যেন তারার এক চমক, মেঘের উপরে
পালে তারে তরুণ বয়সে সদয় আত্মিকগণ
চূড়াগণ মধ্যবর্তী ঝোপের মাঝারে।’
—গ্যাটে।
[হজরত মুহম্মদ গীতি]।

“My choice of Muhammad to lead the list of the world’s most influential persons may surprise some reader’s and may be questioned by others, but he was the only man in history who was supremely successful on both the religious and secular level.”

ÑMichael H Hart
[The 100 : A Ranking of the most influential persons in history]

[ বশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় আমি যে মোহাম্মদকে প্রথমে রেখেছি তাতে কিছু পাঠক বিস্মিত হতে পারেন, কেউ কেউ প্রশ্নও তুলতে পারেন; কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি ধর্মীয় ও ইহজাগতিক উভয় স্তরে সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছেন।’


—মাইকেল এইচ হার্ট। [দি ১০০ : এ র্যাংকিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনসিয়াল পার্সনস ইন হিস্টরি]


‘আমি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিশ্চিত হয়েছি যে, সেই কঠিন সময়ে ইসলাম শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল তরবারির মাধ্যমে নয়, বরং তার সরলতা ও ইসলামের নবীর নম্রতার মাধ্যমে। তাঁর অঙ্গীকার পূরণের দৃঢ়তা, তার বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য তাঁর মমতা, তাঁর নির্ভীকতা, সাহস, সৃষ্টিকর্তা এবং নিজের কাজের ওপর আস্থা। তরবারি নয় বরং এসবই ছিল আসল কারণ। যার দ্বারা তিনি প্রতিহত করছিলেন সকল ধরনের বিপদ।’

—মহাত্মা গান্ধী।
[Young India, 1924]|

‘আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ,

সেই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত।

পয়জার তার লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে,

আমি, ঝরনা হয়ে গ’লে যেতাম অমনি পরম সুখে।
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে,
সেথা, দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত\’
—কাজী নজরুল ইসলাম।

ওপরের উদ্ধৃতিগুলো ব্যবহার করলাম ইচ্ছে করে। কারণ আমার হৃদয় বেদনায় জর্জরিত। আমার বোধশক্তি তিরোহিত। আমি হতবাক, আমি স্তম্ভিত। আমি আতঙ্কিত। এক হাজার চারশ’ বছরের ইতিহাসে রাসুলের (সা.) চরম শত্রুরা যা কখনও কল্পনাও করেনি, সালমান রুশদির মতো সাম্রাজ্যবাদের গৃহপালিত লেখকও যে ভাষা ব্যবহার করতে সাহস পায়নি, এমনকি ধর্মান্ধ ক্রুসেডাররাও যে ভাষা ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ করেছে, তার চাইতেও নোংরা, জঘন্য, অশ্লীল, হিংস্র ও অসভ্য ভাষা ব্যবহার করেছে রাজীবসহ আরও কয়েকজন ব্লগার। যারা ব্লগার নামেরও কলঙ্ক। ডধত্ ডড়ষভ-এর মতো জিঘাংসা নিয়ে এরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাসুলের পবিত্র নামের ওপর। আশ্চর্যের বিষয় এদের কেউ হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ নয়, সবাই মুসলমান অথবা মুসলিম পরিবারের সন্তান। এদের কেউই এলিয়েন নয়, কোনো জন্তু-জানোয়ার নয়। এরাও মানুষ! কোনো না কোনো নারীর জঠরে এদের জন্ম।

এরা যদি মানুষ হয় তাহলে বুঝতে হবে মানুষ শব্দটি তার তাত্পর্য হারিয়ে ফেলেছে। এরা যদি নাস্তিক হয় তাহলেও বুঝতে হবে এরা ভণ্ড নাস্তিক। এরা নাস্তিক হওয়ারও অযোগ্য। কারণ নাস্তিক্যবাদও এক ধরনের বিশ্বাস। একটা বিশ্বাস কখনোই অন্য একটি বিশ্বাসকে আহত করে না, অপমান করে না। এ প্রসঙ্গে মনীষী আহমদ শরীফের (যিনি একজন খাঁটি নাস্তিক ছিলেন) উদ্ধৃতির লোভ সামলাতে পারছি না—‘নাস্তিক হওয়া সহজ নয়।...তাই প্রাচীন ও আধুনিক দুনিয়ার প্রায় প্রত্যেক প্রখ্যাত নাস্তিকই ছিলেন সুজন, সুনাগরিক ও মনীষী।’ রাজীব এবং তার সহচররা তো এই কথার ধারে-কাছেরও কেউ নয়। ওরা তো বন্য বরাহের চাইতেও দাঁতাল এবং কুিসত। চ্যানি বলেছেন, যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারাই যুবক। যারা ধর্মে অবিশ্বাসী তারাই বৃদ্ধ। তাহলে এরা যুবকও নয়, বৃদ্ধও নয়, এরা কদর্য-কোনো প্রাণী। যাদের উদ্দেশ্য হলো দেশে নৈরাজ্য ডেকে আনা। হানাহানি ডেকে আনা। রক্তপাত ডেকে আনা।
ধর্ম হলো মানুষের গভীরতম, নিবিড়তম এক বিশ্বাস। তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থান। সেই জায়গায় যেমন অন্যের প্রবেশাধিকার নেই, তেমনি তাকে অসম্মান করার অধিকারও কারও নেই। এজন্যই রবার্ট বার্টন বলেছেন, ‘ধর্ম মানব মনীষা আর উপলব্ধির এক দুর্লভ কৃতিত্ব আর সম্পদ। ধর্মের কাছে মানুষ পায় আত্মজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জিজ্ঞাসার প্রেরণা, আধ্যাত্মিক ক্ষুধার শান্তি ও সান্ত্বনা। ধর্ম মানুষকে দেখিয়েছে বিশ্বাস, ভক্তি, বিনয়, ক্ষমা, করুণা আর আত্মনিবেদনের পথ, দিয়েছে শৃঙ্খলা আর সংযত জীবনের দীক্ষা।’ সেই স্থানে ড্রাকুলার মতো, শয়তানের মতো, গোঁয়ারের মতো আঘাত করেছে সরকারের নিয়োজিত হাতে-গোনা কয়েকজন ব্লগার।
আসলে এরা ব্লগার নয়, ব্লগারের ছদ্মবেশ পরা ক্ষমতাসীন মহাজোটের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী।
পৃথিবীর দেড়শ’ কোটি মানুষের ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং তাদের রাসুলকে করেছে চরম অপমান এবং তা এমন একসময় যখন সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র, রক্তপিপাসু ইসরাইল এবং আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাস, ভীতি এবং আতঙ্ক। উদ্দেশ্য ইসলাম নির্মূল।
সঙ্গত কারণেই এইসব তথাকথিত ব্লগারদের কর্মকাণ্ডকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এরা এদের অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করেছে সম্প্রীতি, সমঝোতা ও শান্তির বিরুদ্ধে। উস্কে দিতে চেয়েছে আগুন। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে বাংলাদেশকে। আর এদের রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে একটি ব্যর্থ, অযোগ্য, অপদার্থ সরকার ও তাদের পা-চাটা গণমাধ্যম। যারা হারিয়ে ফেলেছে পেশাদারি সততা। সরকারের মতোই এরাও সাইকোপ্যাথ। যারা অন্ধের মতো সবকিছুর মধ্যে জামায়াত-শিবির খুঁজে বেড়ায়। আর চেপে যাচ্ছে সত্যকে।

দুই

আমাদের নেতা তখন আতিকুর রহমান সালু। পূর্ব পাকিস্তান বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের তিনি তখন সাধারণ সম্পাদক। সালু ভাই এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির স্থপতি। আর আমি বলছি ষাটের দশকের শেষ দিককার কথা। সুদূর ভূরুঙ্গামারী থেকে রংপুর এসেছি তার এক জনসভায় যোগ দিতে। ফেরার পথে জড়িয়ে গেলাম হাঙ্গামায়। তখন তো বাহন বলতে কেবল ট্রেন। সেই ট্রেনে আমাদের কামরায় উঠলো ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা প্রথম থেকেই মওলানা ভাসানী এবং মাও সে তুঙ সম্পর্কে আজেবাজে ভাষায় আক্রমণ শুরু করে দিল। আর মওলানা ভাসানী এবং মাও সে তুঙ তখন আমাদের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয় নেতা। আমরা অনুরোধ করলাম বাজে কথা না বলার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা অশ্লীল ভাষার ব্যবহার থেকে বিরত হলো না। শুরু হলো প্রতিআক্রমণ। তারপর যা হয়। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি। হাতাহাতি থেকে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড। ট্রেনের যাত্রীরা ভয়ে চিত্কার শুরু করে দিল। থেমে গেল ট্রেন। ছুটে এলো গার্ড, রেলওয়ে পুলিশ। তারাও থামাতে পারে না। এর মধ্যে ছাত্রলীগের দুই-তিন জনের মাথা ফেটে গেল। আমাদেরও কেউ কেউ রক্তাক্ত।
রাজনৈতিক নেতাদের গালাগাল করার জন্য যদি এত বড় কাণ্ড ঘটতে পারে, তাহলে ধর্মকে অপমান করলে, নবী, অবতারদের অপমান করলে কী ঘটতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
শুধু মুসলমান বলে কথা নয়, হিন্দুদের দেবদেবী, খ্রিস্টানদের যিশু কিংবা বৌদ্ধদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করলেও তারা একই রকমভাবে ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হতে পারে। এই হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে যত যুদ্ধ হয়েছে, রক্ত ঝরেছে, যত ক্রুসেড হয়েছে অন্য কোনোকিছু নিয়ে এত নয়। ভারতে এখনও দাঙ্গাহাঙ্গামা নৈমিত্তিক ব্যাপার। এজন্যই অন্য ধর্মের লোকদের গালমন্দ করার ব্যাপারে কোরআন শরীফে নিষেধাজ্ঞা আছে, ‘আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের পূজা করে তাদের গালমন্দ করো না। তাহলে তারাও ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে।’ [সুরা আল-আনয়াম]।
বলা হয়েছে ‘লা ইকরাহা ফিদদীন’ [ধর্মের বিষয়ে জোর-জবরদস্তি নেই]। হাদিসে আছে রাসুল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সংখ্যালঘুকে অত্যাচার করবে, তার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে, কিংবা তাকে সাধ্যাতিত পরিশ্রম করাবে, তার অমতে তার কিছু ছিনতাই করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার প্রতিপক্ষ হবো।’
ইসলাম বলে, ‘অন্য ধর্মের লোকের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে তর্কবিতর্ক করবে না। যদি তর্কবিতর্ক করতেই হয়, তাহলে তা করো উত্তম পন্থায়।’
আমি পরিষ্কার ভাষায় জানাতে চাই আমি কোনো ধর্মবেত্তা নই। ইসলামী চিন্তাবিদ নই। সেই অর্থে প্র্যাকটিসিং মুসলিমও নই। তারপরও ইসলামের বিশ্বজনীন বাণীর প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ প্রগাঢ়। সেজন্যই পৃথিবীর সব ধর্মের প্রতি, ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি সম্মানবোধ লালন করি অন্তরে। বিশ্বাস করি কোনো ধর্মই বিদ্বেষ ও হানাহানি নয়, মানুষে মানুষে প্রেম ও শান্তিকেই দিয়েছে সর্বাধিক গুরুত্ব।
ব্লগার রাজীবের অন্যায় ও অন্যায্য কাজ এবং তার সহচরদের সহযোগিতা, বাংলাদেশের মানুষের মতো আমাকেও ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত করেছে। বিশেষ করে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে তারা যা লিখেছে তা এককথায় ক্ষমাহীন। সেজন্যই দেশজুড়ে জ্বলে উঠেছে প্রতিরোধের আগুন। ধর্মপ্রাণ মানুষজন পথে নেমেছে রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে নয়, তারা পথে নেমেছে অপমানের বিরুদ্ধে, তাদের দাবি একটাই—এই ঔদ্ধত্য অবশ্যই দেশ, জাতি, ধর্মের বৃহত্তর স্বার্থে, কল্যাণ ও মঙ্গলের স্বার্থে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দিতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সময় ক্ষমতাসীন আছে এমন একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকার, যারা এই ধর্মবিদ্বেষীদের পক্ষ অবলম্বন করে ধর্মপ্রাণ মানুষদের শায়েস্তা করার জন্য নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ তাদের দলীয় ঠাঙ্গারেদের। হামলা মামলায় জেরবার করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি শাহবাগের চত্বরের জমায়েতকে সামনে নিয়ে বিরোধী গণমাধ্যম বিশেষ করে আমার দেশ ও তার সত্যনিষ্ঠ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, দিনকাল, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভির বিরুদ্ধে একের পর এক ছাড়ছে রণহুঙ্কার। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে জটিল কুটিল আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র। নতুন করে দেয়া হয়েছে মামলা। তিনি নাকি উস্কানি দিচ্ছেন। মাহমুদুর রহমান তো খবর ছাপিয়েছেন মাত্র। যারা উস্কানিদাতা তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। কিন্তু উস্কানিদাতাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে এখন উল্টো অভিযোগ চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে মাহমুদুর রহমানের ওপর। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই রকম বিষোদগার ১৯৭৫ সালের পর আর এদেশে দেখা যায়নি। এখন দেয়া হচ্ছে আল্টিমেটাম, গ্রেফতারের হুমকি। শাহবাগের নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের পাশাপাশি এখন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরাও স্বমূর্তি ধারণ করে বকছেন আবোল-তাবোল।
সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ! এখানে শেখ মুজিব কিংবা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে যে কাউকে পেতে হচ্ছে কঠিন দণ্ড। ঘটছে চাকরিচ্যুতি। এখন বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হয়ে পড়ছে ফালতু বিষয়। আর মহানবী (সা.)কে অপমান করলে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করলে পাওয়া যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। মহানবীর গালমন্দকারীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী উপাধি দেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ‘প্রথম শহীদ’। তড়িঘড়ি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছুটে যান দেড়শ’ কোটি মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাতকারীর বাসায়। জানান সহানুভূতি। আর যারা ধর্মের অপমানের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে জঘন্য সব অপবাদ। তাদের হত্যা করা হচ্ছে। কুকুর ও সাপের মতো তাদের পেটানো হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে মসজিদ-মাদরাসাগুলো।
আধিপত্যবাদের তাঁবেদার গণমাধ্যমগুলোও সরকারের পাপিষ্ঠ কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছে কোরাস। তারা সাংবাদিকতা ভুলে গিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদের মতো জুলুমকারীকে বানাচ্ছে বীর। আর নির্যাতিত মুসলমানদের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে অপপ্রচার। তাদেরকেই করছে দোষারোপ। সরকার এবং এই গণমাধ্যম পরিস্থিতিকে শান্ত করার বদলে উল্টো অপরাধীদের উস্কে দিচ্ছে আরও সহিংস হওয়ার জন্য। ধর্ম এবং আদালত দুটোরই এখন লাঞ্ছনার শেষ নেই এদেশে।
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমার দেশ যে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে, তার প্রশংসা করার বদলে তারা এখন পত্রিকার কণ্ঠরোধ করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাদের কর্কশ কণ্ঠকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে।
সঙ্গত কারণেই যে কারও পক্ষেই এই ধারণায় উপনীত হওয়া সহজ যে, সরকার ইসলাম ধর্ম এবং বিরোধী গণমাধ্যমকে পিষে মারার জন্য অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। জামায়াত-শিবিরকে দমন করার উসিলায় তারা আসলে দমন করতে চাচ্ছে সব বিরোধিতাকে। জামায়াত-শিবির দমন হলো তাদের উপলক্ষ, লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো ধ্বংস করে দেয়া। দেশকে ভেতর থেকে অকার্যকর করে দেয়া। সে জন্যই তাদের কাছে এ বিষয় স্পষ্ট যে শাহবাগ চত্বরের জমায়েত হচ্ছে তাদেরই ইচ্ছায়। তাদেরই নির্দেশে। সরকারি নানামাত্রিক ষড়যন্ত্রেরই একটি পর্যায় হলো শাহবাগ। সেজন্যই আজ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচ্ছে কুত্সা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বলা হচ্ছে রাজাকার। শাহবাগ চত্বরের এমরান জাতীয় দলীয় লোকদের হম্বিতম্বি, নাসিরউদ্দিন ইউসুফদের আস্ফাালন ছাড়িয়ে গেছে মাত্রা। আর প্যান্ট খুলে গেছে সরকারের। সরকার ও শাহবাগ এখন একাকার।
সরকার ব্লগ ও ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু তরুণকে বিভ্রান্ত করে তাদের লেলিয়ে দিয়েছে দেশের ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সব ধর্মবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে ডেকে আনছে সহিংসতা। ডেকে আনছে রক্তপাত।
সেজন্যই তাদের দলবাজ বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক লাঠিয়াল এবং ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় হয়েছে অবতীর্ণ। ফলে নিজেদের বেলায় গণতন্ত্র, ১৭ দিন ধরে শাহবাগ দখল করে রাখলেও তাতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষ একদিন মিছিল করলেই তা কবিরা গুনাহ হয়ে যায়। চমত্কার বাকশালী গণতন্ত্র!

তিন

ব্লগার রাজীব কিংবা তার দুষ্কর্মের দোসরদের দোষ দিয়ে সস্তা হাততালি পেতে চাই না আমি। দোষ তো বীজের। দোষ তো পরিবারের। দোষ তো বাবা-মা’র। দোষ তো সমাজের। দোষ রাষ্ট্রের। দোষ রাজনীতির। দোষ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। দোষ আমাদের পরিবেশের।
আমরা তো আমাদের সন্তানদের যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারিনি। যথার্থ শিক্ষা দেইনি। ব্যর্থ পিতামাতার ব্যর্থ শিক্ষা এবং ব্যর্থ রাজনীতির জরায়ু থেকে তো ভালো মানুষ জন্মানোর কোনো পথ নেই। ভালো মানুষ জন্মাতে পারে না। পারে না বলেই জন্ম হচ্ছে রাজীবের মতো, বাপ্পাদিত্যের মতো বিকৃত ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতাসম্পন্ন সন্তানদের।
সেজন্যই অনুরোধ করি, আসুন জাতীয় জীবনের এই চরম দুর্যোগের দিনে, আমরা আমাদের সন্তানদের আবার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে হাত দেই। ফিরিয়ে আনি হারিয়ে যাওয়া নীতি ও নৈতিক শিক্ষায়। তাদের স্বর্ণগর্ভ অতীত সম্পর্কে জ্ঞাত করাই। বর্তমানের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করি। নিশ্চিত করি অনাগত ভবিষ্যত্। রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গন থেকে বিতাড়িত করি দায়িত্বজ্ঞানহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন দেশপ্রেম বর্জিত অসত্, ভণ্ড, প্রতারক রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদদের। তাদেরকেও মাও সেতুঙের মতো, স্টালিনের মতো সংশোধনাগারে পাঠিয়ে আবার মানুষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেই। জাতির ঘাড়ে চেপে থাকা জগদ্দল পাথরের মতো এই দুর্নীতিবাজ, লুটেরা সরকারের লোকজনদেরও ধরে ধরে শ্রম শিবিরে পাঠিয়ে দেখতে বাধ্য করি খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছায়াছবি।
কেবল তাহলেই আমাদের মধ্যে ফিরে আসবে শ্রেয়বোধগুলো। ফিরে আসবে মহত্ত্ব। নইলে নব্য বাকশালীদের জিঘাংসা গিলে খাবে আমাদের সব অর্জন। গিলে খাবে দেশটাকে।
a_hyesikder@yahoo.com

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শাহবাগ নাটক


আ ব দু ল হা ই শি ক দা র




ছাত্রশিবিরের আন্দোলন মোকাবিলায় বেসামাল সরকার যখন হিটলার কিংবা চেঙ্গিস খানের মতো নৃশংসতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করছে ছেলেদের, তুলে নিচ্ছে চোখ, পশুর মতো পিটিয়ে করে দিচ্ছে বিকলাঙ্গ, তখন সেসব নিয়ে কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না শাসকরা। তারা বাংলাদেশের মানুষের গণদাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পদ্মা সেতু কিংবা হলমার্কের মতো পাহাড় সমান ইস্যুগুলোকে পাথরচাপা দিয়ে, নিজেদের দূষিত মুখ ডিসটিলড ওয়াটারে ধুয়ে ফের বীর হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একাত্তরের শত্রু উচ্ছেদের নামে নয়া এজেন্ডা সামনে ঠেলে দিয়েছে। এ কাজে ব্যবহার করছে ডাণ্ডাবাজ ছাত্রলীগ, পেটোয়া যুবলীগ এবং নিজ গৃহে পালিত সাংস্কৃতিক কর্মীদের। আর জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য আবরণ হিসেবে, ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু আবেগাক্রান্ত তরুণকে। কারণ তাদের বয়সটাই এ রকম যে যুক্তির চেয়ে বড় হয়ে ওঠে হৃদয়। এই হৃদয়কে বুদ্ধিমান যে কারও পক্ষে আবেগের স্রোতে ভাসিয়ে নেয়া সম্ভব। এই আবেগের স্রোতে বাংলাদেশের তরুণদের ব্যবহার করেছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। তারা তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সস্তা বুলিসর্বস্ব স্লোগান তুলে বাংলাদেশের তরুণদের ঠেলে দিয়েছিল শেখ মুজিবের রক্ষীবাহিনী, লালবাহিনীসহ নানা ঘাতকদের মুখে। গঠন করেছিল গণবাহিনী। হাজার হাজার তরুণ সে সময় একটি আদর্শ বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে ভুল নেতৃত্বের চোরাবালিতে আটকে অকাতরে প্রাণ হারায়। সেসব নিহত তরুণের রক্তের ওপর পা দিয়ে, তাদের আত্মাহুতির সঙ্গে বেঈমানি করে ইনু সাহেবরা এখন মজাছে মন্ত্রিত্ব করছেন। সেজন্যই তাদের কাছে আমার আবেদন, সস্তা চটকদারি কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। দেশের ভেতরকার বিভাজন রেখাকে উত্পাটন করে সমন্বয়ের পথে তাদের এগোতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যারা বেশি বেশি বলে বেড়ায় তাদের সন্দেহ করতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, শহীদ মুনির চৌধুরী, কবির চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিমের মতো প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিরাও কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আজকের শাহরিয়ার কবির কিংবা মুনতাসির মামুনরাও কিন্তু যুদ্ধে অংশ নেননি। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে বিভেদ ও হানাহানিতে লিপ্ত হননি। যারা এই চেতনাকে হরদম দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেরি করে ফেরে, তাদের সত্যিকার মতলব চিনতে হবে। যদি এই শক্তির স্বরূপ উদঘাটন করতে আমাদের তরুণরা ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে না। বাংলাদেশ পরিণত হবে আরেকটি হায়দারাবাদ কিংবা সিকিমে। আরেকটি বাকশালী ফ্যাসিবাদে জর্জরিত হবে দেশ। এই বাকশালের পদধ্বনি শাসকদল তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে দেশময়। নইলে যুদ্ধাপরাধীদের নাম করে বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যেসব ভয়াবহ উচ্চারণ করানো হয়েছে তা দেশে ডেকে আনবে নৈরাজ্য, বিপর্যয় ও গৃহযুদ্ধ। জামায়াত-শিবির দমনের ছদ্মবেশে তারা আসলে চাচ্ছে দেশপ্রেমিক শক্তির সমূলে উত্পাটন।

দুই.

গিরিশ কনরাডের ‘তুঘলক’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র যদি হন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাহলে বলতে হবে তার চাহিদা মোতাবেক রচিত নাটকের এখন চতুর্থ অংকের অভিনয় হচ্ছে। সর্বত্র এই অভিনয়ের প্রযোজক, পরিচালক, কুশীলব সবকিছুর জোগানদাতা তার সরকার ও শাসক দল। বাদবাকিরা হয়তো তার অদৃশ্য ইশারার ‘বড়ে’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই চতুর্থ অংকের চূড়ান্ত দৃশ্য এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি শাহবাগে।
যারা এর মূল আয়োজক ছিলেন, যারা কাজটি শুরু করেছিলেন এরা এখন পার্শ্বচরিত্র। তারা সূচনা করে দিয়ে মাইক্রোফোন ও মঞ্চ তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি ছক অনুযায়ী শাহবাগ স্কোয়ারের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন সরকার অনুগতদের দখলে। আমাদের মহামহিম সরকার এখানে এক ঢিলে অনেক পাখি মারার কাজটা করেছে।
এই পাখি মারার কৌশল হিসেবেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্ম দিয়েছিল। তারপর জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হলো। সমস্যা দেখা দিল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যে ১৯৫ জনকে স্বয়ং শেখ মুজিব চিহ্নিত করেছিলেন তারা তো আওয়ামী লীগকে ‘টা টা’ দেখিয়ে কবেই পগারপার হয়ে গেছে। সে তালিকায় তো বর্তমান অভিযুক্তদের নাম ছিল না। তো কী করা। এবার ট্রাইব্যুনালকে কিঞ্চিত্ প্রলেপ মাখিয়ে বলা হলো একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে তারা। তারপর অনুগ্রহভাজন লোকদের এনে বানানো হলো কাঠামো। দলীয় উকিল-মোকতারদের নিয়োগ দিয়ে দাবি করা হলো ‘আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’। সাক্ষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে চললো কৃত্রিম প্রমাণ উপস্থাপনের মচ্ছব। অর্থাত্ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সরকার এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। যদি তা না হতো, তাহলে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের নাম দিয়ে দলীয় আইনজীবী, দলীয় তদন্ত কর্মকর্তা ও দেশীয় বিচারকদের নিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হতো না। ট্রাইব্যুনালের ‘পদত্যাগী’ চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে নিয়ে তো শুরুতেই বিতর্ক দানা বাঁধে। তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করেছেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তিনিই একবার এর বিচার করেছেন। এ ধরনের বিতর্কিত লোক দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকারই সৃষ্টি করে চরম বিতর্ক। এখানে আন্তর্জাতিক শব্দটি ছাড়া আর কিছুই আন্তর্জাতিক মানের নেই। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন :
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাধা প্রদানকারীরাও সমান অপরাধী’—এই বক্তব্যকে সমর্থন করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বর্তমানে যে আইনে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বিচার হচ্ছে, এই আইনটি ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তান আর্মির ৪৫ হাজার সেনাসদস্যের ভেতর থেকে গুরুতর অপরাধী হিসেবে ওই ১৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুই তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। মূল যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার অপরাধে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম শেখ মুজিবেরও মরণোত্তর বিচার দাবি করতে পারে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে নিয়ে শাসক দল দেশজুড়ে যে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছে, সে সম্পর্কেও খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য :
আমি ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলাম। ওই সময় দালাল আইনে বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মির এদেশীয় ২৮ হাজার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, ওই ২৮ হাজার বন্দীর মধ্যে এরা কেউ ছিলেন না। এরা যদি এতই ভয়ঙ্কর অপরাধী হতেন, তাহলে এদের একজনকেও ওই সময় গ্রেফতার তো দূরের কথা, এদের কারও বিরুদ্ধে দেশের কোনো একটি থানায় একটি জিডিও করা হলো না কেন? তিনি বলেন, যে কাদের মোল্লাকে এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিনিই স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি যদি ‘কসাই কাদের কিংবা জল্লাদ কাদের’ হন, তাহলে আজ যারা তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা কেন তাকে ওই সময় আটক করে পুলিশে দিলেন না? এ ধরনের অনেক প্রশ্ন আজ সাধারণ জনগণের মাঝে। ফজলুল কাদের চৌধুরীকে দালাল আইনে আটক করা হয়েছে। এখন তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই সময় তার বাবার সঙ্গে তাকেও কেন গ্রেফতার করা হলো না কিংবা তার নামে একটি মামলা বা জিডি করা হলো না? মূলত সরকারের কিছু লোক তাদের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেই। মানুষ চায় এখন তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হোক।

তিন.

সারা পৃথিবী বললো এই আদালত গ্রহণযোগ্য নয়। এটা বিধি মোতাবেক হয়ইনি। কিন্তু সরকারপ্রধান থেকে তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী কর্মীরা পর্যন্ত বললেন, এরকম অনন্যসাধারণ আদালত এদেশে আর হয়নি। এটা পুরোপুরি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ।
এর মধ্যে বোমা ফাটালো দ্য ইকনোমিস্ট। বিস্ফোরণ ঘটালো দৈনিক আমার দেশ। স্কাইপ কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো এর অন্তঃসারশূন্যতা। প্রমাণিত হলো এ কোনো আদালত নয়—এটা হলো কিছু মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য আইনি লেবেল লাগানোর একটা পদ্ধতি।
বাধ্য হয়ে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করে একে আরও অগ্রহণযোগ্য প্রমাণিত করে দিলেন। তারপরও সরকারের মন্ত্রীরা গলার স্বর সপ্তমে চড়িয়ে বলে বেড়াতে লাগলেন, এই আদালত সুন্দর, এই আদালত স্বচ্ছ। আর ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব ক’জন অভিযুক্তকে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
আশ্চর্য, বিচারের আগেই মন্ত্রীরা রায় ঘোষণা করে বেড়াতে লাগলেন। রায় বেরুলো মওলানা আবুল কালাম আজাদের ফাঁসি। মহাখুশি আওয়ামী মহল। ধন্য ধন্য করে উঠলো আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। তাদের জোটের ছাগল-পাগলগুলোও তিড়িং বিড়িং করে বাড়ি মাথায় তুললো।
এই আনন্দ-উল্লাসের মধ্যেই রায় বের হলো আবদুল কাদের মোল্লার। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল তাদেরই আদালত। এবার উল্টো প্রতিক্রিয়া। সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নেতা, পাতি নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সবাই চিত্কার শুরু করে দিলেন এই রায় মানি না। এই বিচার মানি না। জামায়াত তো আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারাও এই রায় মানে না।
জামায়াতের আস্থা, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা তো আগে থেকেই ছিল না। এবার সরকার এবং তাদের অনুগ্রহপ্রাপ্তদের আস্থাও গোল্লায় গেল। দেখা যাচ্ছে এই আদালতের ওপর কারও কোনো ভরসা নেই, আস্থা নেই, গ্রহণযোগ্যতাও নেই।
আওয়ামী লীগের লেগেছে ইজ্জতে। নাকি এটাও নতুন কোনো চাল? কে জানে? তারা আদালতকে বাধ্য করার জন্য ছাড়তে লাগলো হুঙ্কার। পাশাপাশি গগণবিদারী স্লোগান। অনুগত দু’একটি বাম দল এই হুঙ্কারে উদ্বেলিত হয়ে জায়গা নিল শাহবাগ মোড়ে। তাদের গান-বাজনা, বক্তৃতা-বিবৃতির পথ ধরে মাঠে নামলো ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর কিছু তরুণ যারা নিজেদের ব্লগার পরিচয় দিতে পছন্দ করে। আসলে এরাও আওয়ামী লীগের অন্য ধরনের ক্যাডার। তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে হবে—আদালতকে বাধ্য করার জন্য জড়ো হলো। শাহবাগ স্কোয়ার ভরে উঠলো জনসমাগমে। বুঝতে বাকি রইলো না, যারা জড়ো হলেন তাদের ৯৫ ভাগই আওয়ামী লীগের লোকজন। সবার একটাই ‘স্বপ্ন’—শাহবাগ স্কোয়ারকে ‘তাহরির স্কোয়ার’ বানাবেন। এই জনসমাগমকে জনসমুদ্র বানানোর কাজটিও অবশ্য সরকারই করে দিয়েছে।
শাহবাগ স্কোয়ারের আওয়াজকে আরও বুলন্দ করে দেশময়, বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কৃতজ্ঞতাভাজন মিডিয়া উঠলো কলকাকলীমুখর হয়ে।
তাহরির স্কোয়ারে মহাসমাবেশ হয়েছিল স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে। জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, গুম, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের শাহবাগের দাবিতে সেসব কিছু নেই। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড, গুম, ধর্ষণ, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, টিপাইমুখ বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিধ্বস্ত বিচার ব্যবস্থা, মরণোন্মুখ শিক্ষাঙ্গন এখানকার এজেন্ডায় ঠাঁই পায়নি। পাওয়ার কথাও নয়।
শাহবাগের এক দফা এক দাবি। ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারাধীন সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। তাদের বক্তব্যে, আদালত মানি, বিচারও মানি। কিন্তু রায় হতে হবে আমাদের দাবি মোতাবেক। যে আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে, তাকেও রায় বাতিল করে ফাঁসি দিতে হবে। অর্থাত্ এক ধরনের জুডিশিয়াল কিলিং শুরু করতে হবে। এই প্রসঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন : আইন ও আদালতকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। আন্দোলন, বিক্ষোভ ও সংগ্রাম করে আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা মোটেও কাম্য নয়। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। সরকারি দল এখন তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছে। ওই বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় নেতারা এমনকি মন্ত্রীরাও গিয়ে ফাঁসির দাবিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। সামনে আরও মামলার রায় অপেক্ষমাণ। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের কাছে একটি মেসেজ যাচ্ছে। সামনে যদি কাউকে ফাঁসি দেয়া হয়, তাহলে এটা মনে করা খুবই স্বাভাবিক হবে যে, বিচারকরা সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের ভয়ে এই রায় দিয়েছেন। মন্ত্রী ও সরকারি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তাতে বিচারকদের ঘাড়ে ক’টি মাথা যে তারা ফাঁসি ছাড়া অন্য রায় দেবেন? কাজেই আমি বলব, ফাঁসির দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন এমনকি ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতেও যারা আন্দোলন করছেন, তারা ঠিক কাজটি করছেন না। এতে করে দেশ ভয়ানক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা কারও জন্যই কাম্য হতে পারে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতেই চলতে দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যেই আদালত গঠন করুক না কেন, বিচারকরা ‘নিউট্রাল’ বিচার করবেন—এটাই জাতি প্রত্যাশা করে। আদালত রায় দিয়েছেন। সংসদে সরকারি দলের এমপিরাও এ নিয়ে কথা বলছেন। এটা বড়ই দুঃখজনক। তিনি বলেন, আদালত বা রায় নিয়ে হরতাল ও অবরোধ করা উচিত হচ্ছে না। হরতাল বা অবরোধ করে ফাঁসি দেয়া যাবে না। এতে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিচারকরা সব সময় ভয়ে থাকবেন। এসব করে যদি আদালতের কাছ থেকে ফাঁসি আদায় করা হয়, সেটা হবে দুঃখজনক। ব্যারিস্টার হক বলেন, রায়ের পর পুলিশ প্রটেকশনে বিক্ষোভ হচ্ছে। মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে বলেছেন—এ রায় মানি না। তাহলে বিচারকরা কী করে তাদের রায় দেবেন? যেভাবে ফাঁসির দাবি উঠেছে, বিচারকদের তো ফাঁসি না দিয়ে কোনো উপায় নেই। ভবিষ্যতে যে রায় দেবেন তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফাঁসির আদেশ না দিলে, যে বিচারক ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি তার কী অবস্থা হবে! তার ফ্যামিলির কী অবস্থা! কে তাদের প্রটেকশন দেবে?
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশকে একটা আইডিয়াল সিচুয়েশনে আসতে হবে। অ্যাবনরমাল সিচুয়েশনে থাকবে তা কিন্তু কেউ চায় না।
দেশ যখন আদালত ও তাদের রায় নিয়ে সরকারের কাণ্ড-কারখানা দেখে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় অধীর, আদালত যখন পরিষ্কার হুমকি ও ধমকের মুখে, সেই সময় শাহবাগ চত্বরের উদ্যোক্তাদের একজন আরিফ জেবতিক্ বলেছেন, ‘আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল মাথা উঁচু করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন।’ আস্থাহীন, গ্রহণযোগ্যতাহীন, স্বচ্ছতাহীন একটি আদালত রীতিমত ভীতির মুখে দাঁড়িয়ে কীভাবে মাথা উঁচু করে রায় দেবে আল্লাহ মালুম।
আবার মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, আইন ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা যার প্রধান কাজ— তিনি বলেছেন, সব সময় আইনই বড় কথা নয়। মানুষ কী চায় সেটাই বড়। এসব কথা বা বক্তব্য যে তাদের মূল এজেন্ডা নয় তা বোঝা গেল গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদগার থেকে। ’৭৫-পরবর্তী রাজনীতির মুণ্ডুপাত করা থেকে। একই সঙ্গে ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূল করার জন্য আড়াই হাত লাঠি ব্যবহারের নির্দেশ থেকে। বোঝাই যাচ্ছে দেশ ধ্বংস করে, দেশের মানুষকে হত্যা করে হলেও এই অপশক্তি আঁকড়ে থাকতে চাচ্ছে মসনদ। মনে হচ্ছে এজন্য বাইরের হস্তক্ষেপ চাইতেও তারা ইতস্তত করবে না।

চার.

আমি আগেই বলেছি, এখনও বলি, শাহবাগ চত্বরে যে তরুণরা জড়ো হয়েছে তাদের আমি ছোট করে দেখতে চাই না। মমতা দিয়েই দেখতে চাই। কারণ তারা আমারই মতো কোনো না কোনো পিতার আদরের সন্তান। কিন্তু তাদের আচরণ-উচ্চারণ আমাকে স্তম্ভিত করেছে। তাদের জন্য আমার একটাই কথা, আমাদের রাজনীতিবিদরা রাজনীতিকে পচিয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের শাসকদের ভূমিকা অগ্রণী। তারা তোমাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, দেশের সব সমস্যা ও সঙ্কট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, নিজেদের কৃত পাপকে ধামাচাপা দিয়ে, জনগণকে বোকা বানিয়ে আবারও ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। তোমাদের আবেগের সমুদ্রে ভাসিয়ে গোছাতে চাচ্ছে নিজেদের আখের। সেজন্য তোমাদের সতর্ক থাকাটা জরুরি। সরকারি লোকজনের দেশের বাইরে বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদের অভাব নেই। কিন্তু তোমাদের আছে শুধু এই দেশটি। এই বাংলাদেশ। সেই একমাত্র থাকার জায়গাটি যাতে নষ্ট না হয়, যাতে এর অস্তিত্ব বিলীন না হয় সেজন্য তোমাদেরকেই তো লড়তে হবে। দেশ রক্ষার সেই লড়াইয়ের ময়দান থেকে কেউ যাতে তোমাদের সরাতে না পারে সেদিকে প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভেদ আর হানাহানির ভেদবুদ্ধি নিয়ে নানা রঙে, নানা পোশাকে অনেকেই আজ তত্পর। সেই তত্পরতা বোঝার মতো কাণ্ডজ্ঞান তোমাদের থাকতে হবে। যদি তা অনুধাবনে ব্যর্থ হও তাহলে ইতিহাস তোমাদেরও ক্ষমা করবে না।
তরুণদের জাগরণ চাই, সমস্ত অন্তর দিয়ে চাই। কারণ তারাই পলাশীর মাঠে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতা রক্ষার। তাদেরই পূর্বসূরি তিতুমীর সামান্য বাঁশের কেল্লা বানিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবই সংঘটিত হয়েছিল তরুণদের জন্য। তরুণরা না জাগলে দেশ জাগে না। এখন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের কর্তব্য হবে তারুণ্যকে সঠিক পথে পরিচালনা করা। তারা কেন বিশেষ দলের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হবে?

পাঁচ.

শাহবাগে সরকার প্রযোজিত, পরিচালিত ও অভিনীত যা কিছু হচ্ছে তার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেছি। তারপরও দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই—কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকবেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ কখনও যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে না। পারে না বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও পাবেন না। পারবেন না এই সরকারকে ক্ষমতার মঞ্চ থেকে বিতাড়িত করতে।
শাহবাগের চতুর্থ অংকের ফসল শেখ হাসিনা ঘরে তুলতে পারবেন কি-না জানি না। তবে পঞ্চম অংকের দৃশ্যগুলো যে দেশকে টালমাটাল করে দেবে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। সেই দুঃসময় যদি আসে, তাহলে দেশপ্রেমিকরা যেন সুদৃঢ় ঐক্য ও সংহতির মধ্য দিয়ে দেশ রক্ষার কাজটি ঠিকমত সম্পাদন করতে পারেন সেই আশায় ব্যাকুল হয়ে রইলাম।
a_hyesekder@yahoo.com