আ ব দু ল হা ই শি ক দা র
এই লেখাটি যখন লিখছি তখন নজিরবিহীন কতগুলো ঘটনা ঘটিয়ে বসে আছে শাসকরা, দেশের বিরোধী দলগুলোর ৩৩ জন নেতাকে একসঙ্গে জেলে পাঠিয়ে স্থাপন করেছে এক আক্কেলগুড়ুম হওয়া দৃষ্টান্ত। জননেতা ইলিয়াস আলীর কোনো খবর দিচ্ছে না সরকার। সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখন হিমাগারে। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যার কারণ অনুদ্ঘাটিত। পুলিশের নির্মম নির্যাতনে মারা গেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক আজিজুর রহমান। পুলিশি বর্বরতার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও খায়রুল কবির খোকন। মাধবপুরে পাওয়া গেছে ছাত্রদল কর্মীর মাথাকাটা লাশ। তানোরে পাওয়া গেছে যুবক উজ্জ্বলের মৃতদেহ। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে মরছে ৩০ জন করে নিরীহ নিরপরাধ মানুষ। প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে মা-বোনেরা। উল্টোদিকে, জনতার দিকে বীরদর্পে গুলি ছুঁড়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি গিয়াস উদ্দিন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস কেলেঙ্কারির ঐতিহ্যবাহী পথ ধরে আরেক এমপি শামসুল হক চৌধুরীর এপিএসের গুদাম থেকে র্যাব উদ্ধার করেছে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা।
তবুও আমার আজকের বিষয় ইউনূসবধ কাব্যের দ্বিতীয় পর্ব।
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন, দুর্নীতির বদনাম ঘোচাতে পারলে তিনি বিশ্বব্যাংককে বলবেন পদ্মা সেতুর জন্য টাকা দিতে। ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রণব মুখার্জি পুরনো প্রেমের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন তার অফিসে গিয়ে। তারপর ঠাস ঠাস করে বললেন, দলনিরপেক্ষ ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশন তারা বাংলাদেশে দেখতে চান। বললেন কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়, ভারতের বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে।
এইসব শুনে শুনে এমনিতেই মাথায় বায়ু চড়ছিল আমাদের সরকারের। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আগমন ও প্রস্থানের পর সরকারের ভেতরকার বায়ু ঊনপঞ্চাশ রকমের টাইফুন সৃষ্টি করেছে। যার লণ্ডভণ্ড তাণ্ডবে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেশবাসীর।
সাধু ভাষায় হিলারি বয়ান
বাংলা সাহিত্যে ‘মঙ্গল কাব্য’ নামে একটি ধারা রহিয়াছে। দেবীদের তুষ্ট করিবার জন্য, আরাধনার অংশ হিসাবে বাংলাভাষী কবিরা ‘মঙ্গল কাব্য’ লিখিয়া দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করিতেন। আপনার জন্যও ‘অন্নদা মঙ্গল’, ‘চণ্ডী মঙ্গল’, ‘মনসা মঙ্গল’ জাতীয় ‘হিলারি মঙ্গল’ লিখিয়া পুণ্যলাভের খায়েশ আমার ছিল। কারণ মানবকুলের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই ব্যক্তির একজন আপনি। আবার আপনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর মাতাও বটে। আপনাকে সকাল-বিকাল কদমবুচি না করিলে ক্ষমতায় থাকাও যায় না, ক্ষমতায় আরোহণও করা যায় না।
কিন্তু এ আপনি কী করিলেন? জগতের আগুন নির্বাপণের বদলে আপনি আমাদের শাসকদের দিলের আগুন ৭০ গুণ বাড়াইয়া দিয়া গেলেন। সেই আগুনে আমাদের শাসকদের চক্ষু অগ্নিবর্ণ ধারণ করিয়া সকল কিছু সংহার করিতে এখন উদ্যত। মাঝখানে পড়িয়া নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন দ্বিতীয়বারের মতো শিক কাবাব হইবার উপক্রম হইয়াছে।
মাতঃ হিলারি, হে মহামহিম মার্কিনি দেবী, আপনি বিমানবন্দরে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ৫০ মিনিট ঠা ঠা রৌদ্রের মধ্যে খাড়া করাইয়া রাখিলেন। দীপু মনি রৌদ্রে পুড়িয়া ঘামে ভিজিয়া যখন জেরবার, সেই সময় আপনি বিমানের বাহিরে আসিলেন। এই কর্মের পর, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আপনি ইলিয়াস আলী, আমিনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ ব্যাংকের নাম উচ্চারণ করিলেন। ইহার পর আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডিনার খাওয়ার দীপু মনির নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করিয়া বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় গমন করিলেন। এইখানেই শেষ নহে, ইহার পর তাহার সাথে হাসিয়া হাসিয়া একত্রে ডাবের পানি, জামরুল, পাটিসাপটা পিঠা ইত্যাদি ভক্ষণ করিয়া, ইলিয়াস-কন্যাকে কোলে তুলিয়া ছবি তুলিলেন। পরদিন সকালে শাসকদের না জানাইয়া তরুণ-তরুণীদের সাথে বাংলাদেশী আড্ডা দিলেন। এইখানেই যদি সব সমাপ্ত হইতো তাহা হইলে হয়তো কিছু হইতো না। কিন্তু গরম তপ্ত চুল্লির উপর ঘৃত ঢালিয়া দিয়া আপনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদের সাথে একান্তভাবে ঘরোয়া সাক্ষাত্কারে মিলিত হইলেন। তাহারপর তিনজনে একত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সাফাই গাহিলেন। তাহারপর শাসকদের অষ্টরম্ভা দেখাইয়া আপনি বাংলাদেশ ত্যাগ করিলেন।
মাতঃ, আপনি তো উড়াল দিয়া পগাড় পার হইলেন। পিছনে দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল আমাদের আমির উমরাহ এবং উজির সাহেব ও সাহেবানদের সৃজনশীলতা।
তাহাদিগের মধ্যে দৃশ্যমান এইরকম সৃজনশীলতাকে বক্ষে ধারণ করিয়া আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রণয়ন করিয়াছিলেন ‘ইউনূসবধ কাব্য’-এর প্রথম পর্ব। তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া তাহার পারিষদবর্গ এবার কোমরে গামছা বাঁধিয়া ‘ইউনূসবধ কাব্য দ্বিতীয় পর্ব’ রচনার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন।
মাতঃ হিলারি, এ আপনি কী করিলেন?
নস্ট্রাডুমাস হইতে সাজেদা চৌধুরী
দিনটি ছিল ৮ মে ২০১২। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীর ৭৭তম জন্মদিন। ওইদিন আল্লাহ পাকের অসীম কুদরতে তার মধ্যে জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কে রুহানি ফয়েজ হাসিল হলো। তিনি পৃথিবীখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ট্রাডুমাস ও শাহ নেয়ামতুল্লাহর মতো দিব্যজ্ঞান লাভ করে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন।
ওইদিন গুলশানের নিজ বাসভবনে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিজ অলৌকিক ক্ষমতা লাভের প্রথম কিস্তি জাহির করে বললেন, খালেদা জিয়া কোনোদিন রাজনীতি করেননি। তার স্বামী কিছু সময় ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। না, এটা তার ভবিষ্যদ্বাণী নয়, এটা হলো ‘অতীত কালচার’। তবে এই অতীত কালচার বয়ান করার সময় তিনি অবশ্য সঙ্গত কারণেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে মরহুম শেখ মুজিব কর্তৃক গণতন্ত্রবধের অনন্য কীর্তি চেপে গেছেন। যেমন চেপে গেছেন ১৯৭৪ সালের ১৬ জুন সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করার কালো দিনটির কথা।
থাক সে কথা। তার ভবিষ্যদ্ববাণী নিয়ে কথা বলি। তিনি ওই অনুষ্ঠানেই ভবিষ্যদ্বাণী করে জাতিকে শিহরিত করে বলেছেন, ‘ড. ইউনূস ক্ষণস্থায়ী। এরা কিছুদিনের জন্য আসে আবার চলে যায়। একদিন হারিয়ে যাবে।’ কে কে ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবেন না, সে কথা তিনি না বললেও তার গুণমুগ্ধরা বলছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, মাহবুব উল আলম হানিফ, দিলীপ বড়ুয়া, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, আসলাম সানী, শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারী, সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ফারুক খান প্রমুখ ব্যক্তি হয়তো ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তারা হারিয়ে যাবেন না।
আমরা জানি না, শ্রদ্ধেয়া সাজেদা চৌধুরী এরপর কোনো ‘ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান কেন্দ্র’ খুলবেন কিনা। খুললে অবশ্য ফুটপাতের আলতু-ফালতুসহ সব জ্যোতিষীর ভাত মারা যাবে। তবে সাইড বিজনেস হিসেবে বিষয়টা মন্দ নয়।
আবুল মালের ‘রাবিশ তত্ত্ব’
আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় থেকে ‘স্বৈরাচারের দালাল’ বলে বিস্তর গালি খেয়েছেন তখন তার মুখ দিয়ে ‘উহ্’ শব্দটি বের হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আওয়ামী লীগের তালেবর তারপর মন্ত্রীবর হওয়ার পর থেকেই তার জবান খুলে গেছে। সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। এখন সেই খোলা জবান দিয়ে তিনি হামেশাই একে ওকে গালমন্দ করছেন। এর মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় গালিটি হলো ‘রাবিশ’।
এই গালি তিনি প্রথম চালু করেন শেয়ারবাজারে সর্বস্বান্ত হওয়া ৩৩ লাখ অসহায় লগ্নিকারীর বিরুদ্ধে। সরকারের অব্যবস্থা ও অপব্যবস্থায় যারা রাতারাতি সব কিছু হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছিল, সেই শেয়ার ব্যবসায়ীরা তার দৃষ্টিতে ছিল টোটালি ‘রাবিশ’। তাদের তিনি জুয়াড়ি বলতেও ছাড়েননি।
বোধ করি এই গালমন্দ বাধাগ্রস্ত না হওয়ার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এবার এই গালিবর্ষণ করেছেন ড. ইউনূসের ওপর। বলেছেন ড. ইউনূসের বক্তব্য ‘রাবিশ’। এরপর ‘সরি’ বলে আবার জোর দেন তিনি, যা বলেছেন এটাই ঠিক।
এক হাত দেখিয়েছেন তিনি হিলারি ক্লিনটনকেও। কারণ হিলারি বলে গেছেন, ‘আমি মুহাম্মদ ইউনূস ও তার কাজকে সম্মান করি। আমি আশা করি, তার কাজ অব্যাহত থাকবে এবং সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে তা ব্যাহত হবে না। যদি হয়, তাহলে তা হবে দুঃখজনক।’
আসলে বাংলাদেশ সফরকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে হিলারি তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলে গেছেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিরোধের বিষয়টি আমি ওয়াশিংটন থেকেই নজর রাখছি। আমি শুধু আশা করতে পারি, এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য খর্বিত হয়।’ এরপর ড. ইউনূস নাকি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করার কথা বলেছেন।
ব্যস, আর যায় কোথায়? অর্থমন্ত্রী রেগে একেবারে টং। বলে বসলেন, হিলারির বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
এখন কেউ যদি মুখ ফসকে বলে বসে, সবাইকে ‘রাবিশ’ বলে বলে তিনি নিজে একটা মূর্তিমান ‘রাবিশে’ পরিণত হয়েছেন। তাহলে উপায় কি?
সৈয়দ আশরাফের অভূতপূর্ব আবিষ্কার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের ঋণ কোনোদিন শেষ হওয়ার নয়। তার কাছে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। অভূতপূর্ব দুটি অনন্যসাধারণ আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে অপার আনন্দে ভাসিয়েছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রাপ্ত পর্যন্ত তার এই আবিষ্কারের আনন্দ ঢেউ খেলে খেলে বেড়াচ্ছে।
তার প্রথম আবিষ্কারের দুটি অংশ। প্রথমাংশে তিনি জ্ঞানতাপস ড. শহীদুল্লাহর চাইতেও দৃঢ়তা নিয়ে ড. ইউনূসের বেসিক সাবজেক্ট অর্থনীতি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট করলেন একজন কিন্তু অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেলেন না। নোবেল পেলেন কোথায়? পেলেন শান্তিতে। কোন যুদ্ধে উনি শান্তি আনলেন? কোন মহাদেশে উনি শান্তি আনছেন?’
অর্থাত্ যুদ্ধ না থামালে শান্তি পুরস্কার পাওয়া যায় না। এই যে আবিষ্কার, এর দ্বিতীয়াংশে আছে আয়ারল্যান্ডের ‘মাদারল্যান্ড পিস’ নামীয় এক সংগঠনের দুই মহিলা নাকি সংগঠন করার দুই মাসের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পান শান্তিতে। তারপর টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই মহিলার মধ্যে ঝগড়া বাধে। তিন মাসের মধ্যে এই ঝগড়া আদালতে গড়ায়। শান্তির কর্ম কাবার। দ্বিতীয়াংশের এই আবিষ্কারটিও অসাধারণ। কারণ সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের পর অনেকেই নোবেল কমিটি ও আয়ারল্যান্ডে যোগাযোগ করে এরকম সংগঠন ও নোবেল পাওয়ার কোনো আলামত খুঁজে পাননি। কিন্তু তাতে কী? তাতে তো এই আবিষ্কারের মর্যাদা খাটো হয়ে যায় না!
সৈয়দ আশরাফের দুই নম্বর আবিষ্কারটি সত্যিকারের আবিষ্কার। আবিষ্কারের বাচ্চা আবিষ্কার। বাঘের বাচ্চা আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি চিরকাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। যে পুরস্কার পাওয়ার জন্য সারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় মানুষ মুখিয়ে থাকে, সেই নোবেল কীভাবে পাওয়া যায়, তা তিনি আবিষ্কার করে সবাইকে চমত্কৃত, বিস্মিত ও হতভম্ব করে ফেলেছেন। হার্টের জোর যাদের কম তাদের অনেকে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। এমন একটা সামান্য বিষয় আমরা জানতাম না বলে বিশ্বের দেশে দেশে অনেক জ্ঞানীগুণী টেবিলে, দেয়ালে, ইলেকট্রিকের থাম্বায় মাথা আছড়াচ্ছেন।
এবার তার সেই মহান আবিষ্কারটি তুলে ধরছি। নোবেল কীভাবে আসে তা আমাদের এখানে অনেকেই জানেন মন্তব্য করে বলেছেন, ‘নোবেল কীভাবে দেয়া হয়, কীভাবে আসে, কেন দেয়া হয়—সে বিষয়ে আমারও অনেক অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্বের কিছু দেশ আছে যেখানে গিয়ে চিপস, স্যান্ডউইচ আর হোয়াইট ওয়াইন খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে। সময়মত নোবেল প্রাইজ পাওয়া যায়।’
সৈয়দ আশরাফের এই মহা মহা আবিষ্কারে আমার মতো অনেকেরই হয়তো দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল। কারণ তিনি শুধু আবিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি। বলেছেন, এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতাও আছে। কী আশ্চর্য, আমাদের হাতের কাছে, ঘরের ভেতরে এমন একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক আছেন তা এদ্দিন আমরা জানতেও পারিনি! পোড়া কপাল আর কাকে বলে!
দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফের কাছে আমাদের কাতর অনুরোধ, দোহাই আল্লাহর, এবার দয়া করে জানিয়ে দেন, কোন কোন দেশে গিয়ে চিপস, স্যান্ডউইচ আর সাদা মদ খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে, যা আখেরে জুটিয়ে দেবে নোবেল।
আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, দরখাস্ত—যে আবিষ্কার আপনি করে ফেলেছেন, তা বাংলাদেশের কল্যাণে উত্সর্গ করুন। বিশ্ব মানবতার সেবায় উত্সর্গ করুন। দয়া করে আপনি, ‘নোবেলপ্রাপ্তির সহজ উপায়’ অথবা নিজের নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘আশরাফিয়া নোবেলপ্রাপ্তির কোচিং সেন্টার’ খুলুন। আমরা যে যে দলই করি না কেন, সবাই মিলে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে আপনাকে সেই সেন্টারের ‘প্রিন্সিপাল’-এর চেয়ারে বসিয়ে মানবজনম সার্থক করবো।
আপনার সেই কোচিং সেন্টারে গিয়ে আমরা যারা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য পাগল, উন্মাদ, বেহুঁশ ও বেসামাল হয়ে আছি, তারা কোচিং নেব। তারপর দেশের শহরবন্দর, গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে নোবেল পুরস্কার ঢুকিয়ে দেশ ও জাতিকে ধন্য করবো।
প্লিজ চুপ করে থাকবেন না, কোন কোন দেশে গিয়ে ‘মাল খেলে’ নোবেল পাওয়া যায় তা আমাদের বলুন। আমরা সেইসব দেশে গিয়ে ‘মাল খাওয়া কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার’ তা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব। অবশ্য আরও একটা উপকার হবে, আমাদের আদম ব্যাপারীরাও উড়োজাহাজ, জাহাজ, ট্রলার, কনটেইনারের খোল ভরে ভরে বঙ্গসন্তানদের ওইসব দেশে পাচার করে টু-পাইস কামাতে পারবে। দেশের অর্থনীতিতেও তা কাজ দেবে।
আবার শুধু দেশবাসী নয়, বিদেশিরাও আপনার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য বেহুঁশ হয়ে ছুটে আসবে। তাতে আমাদের আয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। প্রসার ঘটবে পর্যটন শিল্পেরও। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশের সুনাম। আর ‘অমর’ হবেন আপনি।
দুই কান কাটা কাণ্ড : দিলীপের দড়াবাজি
বড় বড় মন্ত্রী-নেতাদের কারবার দেখে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চুপ থাকেন কী করে? কুঁজোরও তো ইচ্ছে করে চিত্ হয়ে শুতে। ডান কান কাটা হাঁটে পথের ডান দিক ঘেঁষে। বাম কান কাটা হাঁটে পথের বাম ঘেঁষে। আর যার দুই কানই কাটা সে হাঁটে নাকি পথের মাঝ দিয়ে, বুক টান করে। অতএব মহাজোট সরকারের সঙ্গী বিশিষ্ট রাজনৈতিক এতিম, ‘তিন নম্বর বাচ্চা’ দিলীপ বড়ুয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরে পড়ার মওকা মিস করেন কী করে? ড. ইউনূসের গুষ্ঠি নিকাশের কাজে তিনি নাম লেখালেন।
এর আগে তিনি বলেছেন, উন্নয়নের ঠেলায় নাকি দেশে ফকির উঠে গেছে। সবাই সচ্ছল হয়ে গেছে। এই রাজনৈতিক সর্বহারা সারাক্ষণ থাকে পুলিশ আর অফিসারবেষ্টিত। তো তার আশপাশে ফকির আসবে কোত্থেকে। কিন্তু এই মন্ত্রী মহোদয়কে তা বোঝাবে কে? তিনি তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় বুঝে নিলেন দেশে এখন আর ফকির নেই।
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার রাজনৈতিক দর্শন ও অবস্থানের সঙ্গে গাদ্দারি করে দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রী হয়েছেন। মান্নান ভূঁইয়া আর প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের দয়ায় যার নাকি জীবিকা নির্বাহ হতো। তিনি রাতারাতি মন্ত্রী বনে ধরাকে সরা জ্ঞান করতেই পারেন। আবার বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে চীনও ঘুরে এসেছিলেন।
কিন্তু শিল্প দফতরের মন্ত্রী হওয়ার পরও তাকে নিয়ে কোথাও তেমন হৈচৈ নেই দেখে বোধ করি তার মন খারাপ থাকতো সবসময়। গ্রামেগঞ্জে একটা কথা আছে, পতিতার যখন বয়স বেড়ে যায়, সে হয়ে যায় খালা। কেউ আর তার দিকে তাকায় না। সঙ্গত কারণেই তার মন খারাপ থাকে। কেউ যাতে তার দিকে তাকায়, কেউ তাকে একটা গাল দেয়, সেই আশায় সে কি করে, পথের মাঝখানে মলত্যাগ করে। কোনো ব্যক্তি যদি অন্যমনস্কতাবশত সেই মলের ওপর পা দেয়, তো সে রেগেমেগে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি করে। এই দৃশ্য আড়াল থেকে দেখে ‘খালা’ নাকি প্রাণ খুলে হাসে। বলে, যাক এখনও লোকেরা তাহলে আমাকে মনে রেখেছে।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া যিনি তিন-তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ১২০০-এর মতো। যার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রতিবার, সেই ‘মহা জনপ্রিয়’ দিলীপ বড়ুয়া ড. ইউনূসকে ছুড়ে দিলেন কঠিন চ্যালেঞ্জ(!), ‘তত্ত্বাবধায়ক যদি এতই ভালো লাগে তাহলে রাজনীতিতে আসুন। রাজনীতিতে এসে নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে তারপর কথা বলুন।’—বুঝুন ঠেলা!
বেরসিক ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
আমাদের কর্তাদের এইসব মন্তব্য, ভাষণ শুনে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মতোই বিরক্ত হন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক উল হক। তিনি গত ১২ মে এক আলোচনা সভায় বলেই ফেললেন, ‘একটি বড় দলের নেতা ও মন্ত্রী যদি মনে করেন শান্তিতে নোবেল পেতে হলে যুদ্ধ থামাতে হবে, তাহলে বোঝেন আমরা কত বড় বেকুবের দেশে আছি।’
দিলীপ বড়ুয়া প্রসঙ্গে বললেন, ‘তিনি ড. ইউনূসের নখের সমান হওয়ার যোগ্যও নন। একজন মন্ত্রী যদি বেকুবের মতো কথা বলেন তাহলে তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হয় না।’ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর বলেন, ‘একজন মানি লোককে এভাবে অপমান করার চেয়ে আর জঘন্য কিছু হতে পারে না।’
ব্যারিস্টার রফিক উল হকের এই মন্তব্য প্রচারের পর অন্যরা খামোশ হলেও দিলীপ বড়ুয়াকে থামায় কে? তিনি তো সর্বহারা! তার তো মন্ত্রিত্বটুকু ছাড়া আর হারাবার কিছু নেই। সেজন্য আবার উচ্চকণ্ঠ হলেন। বললেন, ‘ইউনূসের মতো রক্তচোষা নই আমি।’
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা যারা বলে তাদের চিহ্নিত করার জন্য বাংলা অভিধানে শব্দ আছে। সে সব শব্দ দিলীপ বড়ুয়ার ব্যাপারে ব্যবহার করলেই কি আর না করলেই কি? তার তো কিছু আসে যায় না।
সেজন্যই এই বেপরোয়া মন্ত্রী মহোদয় আবার বেপরোয়ার মতো কথা বলতে শুরু করেছেন। তবে এবারের টার্গেট ড. ইউনূস নন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যারা টকশোতে অংশ নেন সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘টকশোধারীরা জেগে ঘুমান।’ তিনি তাদের ‘অন্ধ’ আখ্যায়িত করে বলেন, সেজন্যই তারা সরকারের উন্নয়ন দেখতে পান না।...তারা অদৃশ্য শক্তির ওপর ভর করে ক্ষমতায় বসতে চায়। তবে দেশের জনগণ তা হতে দেবে না।
উপসংহার
পর পর পাঁচবার ছেলে ফেল করেছে এসএসসি পরীক্ষায়। ষষ্ঠবার পরীক্ষার পর ছেলে যাচ্ছে রেজাল্ট আনতে। বাপ জব্বার মিয়া ডেকে বললো, শোন, এবার যদি ফেল করিস তাহলে ফিরে এসে আমাকে আর আব্বা বলে ডাকবি না। মনে থাকবে?
ছেলে মাথা নেড়ে বললো, জ্বি মনে থাকবে।
দুপুরে যথারীতি বিফল পুত্র বাড়ি ফিরে বাপকে খবরটা দেয়ার জন্য ডাকতে শুরু করলো, জব্বার মিয়া, ও জব্বার মিয়া—
রেগেমেগে ঘর থেকে বাইরে এসে জব্বার মিয়া ছেলেকে বললো, কিরে হারামজাদা, বাপকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করেছিস...
ছেলে বললো, কী করবো, আপনিই তো বলে দিয়েছেন।
প্রিয় পাঠক, আমাদের ইউনূসবধ কাব্য দ্বিতীয় পর্বের এখানেই সমাপ্তি। আশা করি আমরা সবাই আগামী দিনগুলোকে চোখ মেলে দেখার জন্য আয়ু পাব।
a_hyesikder@yahoo.com
তবুও আমার আজকের বিষয় ইউনূসবধ কাব্যের দ্বিতীয় পর্ব।
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন, দুর্নীতির বদনাম ঘোচাতে পারলে তিনি বিশ্বব্যাংককে বলবেন পদ্মা সেতুর জন্য টাকা দিতে। ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রণব মুখার্জি পুরনো প্রেমের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন তার অফিসে গিয়ে। তারপর ঠাস ঠাস করে বললেন, দলনিরপেক্ষ ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশন তারা বাংলাদেশে দেখতে চান। বললেন কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়, ভারতের বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে।
এইসব শুনে শুনে এমনিতেই মাথায় বায়ু চড়ছিল আমাদের সরকারের। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আগমন ও প্রস্থানের পর সরকারের ভেতরকার বায়ু ঊনপঞ্চাশ রকমের টাইফুন সৃষ্টি করেছে। যার লণ্ডভণ্ড তাণ্ডবে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেশবাসীর।
সাধু ভাষায় হিলারি বয়ান
বাংলা সাহিত্যে ‘মঙ্গল কাব্য’ নামে একটি ধারা রহিয়াছে। দেবীদের তুষ্ট করিবার জন্য, আরাধনার অংশ হিসাবে বাংলাভাষী কবিরা ‘মঙ্গল কাব্য’ লিখিয়া দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করিতেন। আপনার জন্যও ‘অন্নদা মঙ্গল’, ‘চণ্ডী মঙ্গল’, ‘মনসা মঙ্গল’ জাতীয় ‘হিলারি মঙ্গল’ লিখিয়া পুণ্যলাভের খায়েশ আমার ছিল। কারণ মানবকুলের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই ব্যক্তির একজন আপনি। আবার আপনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর মাতাও বটে। আপনাকে সকাল-বিকাল কদমবুচি না করিলে ক্ষমতায় থাকাও যায় না, ক্ষমতায় আরোহণও করা যায় না।
কিন্তু এ আপনি কী করিলেন? জগতের আগুন নির্বাপণের বদলে আপনি আমাদের শাসকদের দিলের আগুন ৭০ গুণ বাড়াইয়া দিয়া গেলেন। সেই আগুনে আমাদের শাসকদের চক্ষু অগ্নিবর্ণ ধারণ করিয়া সকল কিছু সংহার করিতে এখন উদ্যত। মাঝখানে পড়িয়া নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন দ্বিতীয়বারের মতো শিক কাবাব হইবার উপক্রম হইয়াছে।
মাতঃ হিলারি, হে মহামহিম মার্কিনি দেবী, আপনি বিমানবন্দরে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ৫০ মিনিট ঠা ঠা রৌদ্রের মধ্যে খাড়া করাইয়া রাখিলেন। দীপু মনি রৌদ্রে পুড়িয়া ঘামে ভিজিয়া যখন জেরবার, সেই সময় আপনি বিমানের বাহিরে আসিলেন। এই কর্মের পর, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আপনি ইলিয়াস আলী, আমিনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ ব্যাংকের নাম উচ্চারণ করিলেন। ইহার পর আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডিনার খাওয়ার দীপু মনির নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করিয়া বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় গমন করিলেন। এইখানেই শেষ নহে, ইহার পর তাহার সাথে হাসিয়া হাসিয়া একত্রে ডাবের পানি, জামরুল, পাটিসাপটা পিঠা ইত্যাদি ভক্ষণ করিয়া, ইলিয়াস-কন্যাকে কোলে তুলিয়া ছবি তুলিলেন। পরদিন সকালে শাসকদের না জানাইয়া তরুণ-তরুণীদের সাথে বাংলাদেশী আড্ডা দিলেন। এইখানেই যদি সব সমাপ্ত হইতো তাহা হইলে হয়তো কিছু হইতো না। কিন্তু গরম তপ্ত চুল্লির উপর ঘৃত ঢালিয়া দিয়া আপনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদের সাথে একান্তভাবে ঘরোয়া সাক্ষাত্কারে মিলিত হইলেন। তাহারপর তিনজনে একত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সাফাই গাহিলেন। তাহারপর শাসকদের অষ্টরম্ভা দেখাইয়া আপনি বাংলাদেশ ত্যাগ করিলেন।
মাতঃ, আপনি তো উড়াল দিয়া পগাড় পার হইলেন। পিছনে দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল আমাদের আমির উমরাহ এবং উজির সাহেব ও সাহেবানদের সৃজনশীলতা।
তাহাদিগের মধ্যে দৃশ্যমান এইরকম সৃজনশীলতাকে বক্ষে ধারণ করিয়া আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রণয়ন করিয়াছিলেন ‘ইউনূসবধ কাব্য’-এর প্রথম পর্ব। তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া তাহার পারিষদবর্গ এবার কোমরে গামছা বাঁধিয়া ‘ইউনূসবধ কাব্য দ্বিতীয় পর্ব’ রচনার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন।
মাতঃ হিলারি, এ আপনি কী করিলেন?
নস্ট্রাডুমাস হইতে সাজেদা চৌধুরী
দিনটি ছিল ৮ মে ২০১২। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীর ৭৭তম জন্মদিন। ওইদিন আল্লাহ পাকের অসীম কুদরতে তার মধ্যে জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কে রুহানি ফয়েজ হাসিল হলো। তিনি পৃথিবীখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ট্রাডুমাস ও শাহ নেয়ামতুল্লাহর মতো দিব্যজ্ঞান লাভ করে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন।
ওইদিন গুলশানের নিজ বাসভবনে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিজ অলৌকিক ক্ষমতা লাভের প্রথম কিস্তি জাহির করে বললেন, খালেদা জিয়া কোনোদিন রাজনীতি করেননি। তার স্বামী কিছু সময় ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। না, এটা তার ভবিষ্যদ্বাণী নয়, এটা হলো ‘অতীত কালচার’। তবে এই অতীত কালচার বয়ান করার সময় তিনি অবশ্য সঙ্গত কারণেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে মরহুম শেখ মুজিব কর্তৃক গণতন্ত্রবধের অনন্য কীর্তি চেপে গেছেন। যেমন চেপে গেছেন ১৯৭৪ সালের ১৬ জুন সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করার কালো দিনটির কথা।
থাক সে কথা। তার ভবিষ্যদ্ববাণী নিয়ে কথা বলি। তিনি ওই অনুষ্ঠানেই ভবিষ্যদ্বাণী করে জাতিকে শিহরিত করে বলেছেন, ‘ড. ইউনূস ক্ষণস্থায়ী। এরা কিছুদিনের জন্য আসে আবার চলে যায়। একদিন হারিয়ে যাবে।’ কে কে ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবেন না, সে কথা তিনি না বললেও তার গুণমুগ্ধরা বলছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, মাহবুব উল আলম হানিফ, দিলীপ বড়ুয়া, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, আসলাম সানী, শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারী, সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ফারুক খান প্রমুখ ব্যক্তি হয়তো ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তারা হারিয়ে যাবেন না।
আমরা জানি না, শ্রদ্ধেয়া সাজেদা চৌধুরী এরপর কোনো ‘ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান কেন্দ্র’ খুলবেন কিনা। খুললে অবশ্য ফুটপাতের আলতু-ফালতুসহ সব জ্যোতিষীর ভাত মারা যাবে। তবে সাইড বিজনেস হিসেবে বিষয়টা মন্দ নয়।
আবুল মালের ‘রাবিশ তত্ত্ব’
আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় থেকে ‘স্বৈরাচারের দালাল’ বলে বিস্তর গালি খেয়েছেন তখন তার মুখ দিয়ে ‘উহ্’ শব্দটি বের হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আওয়ামী লীগের তালেবর তারপর মন্ত্রীবর হওয়ার পর থেকেই তার জবান খুলে গেছে। সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। এখন সেই খোলা জবান দিয়ে তিনি হামেশাই একে ওকে গালমন্দ করছেন। এর মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় গালিটি হলো ‘রাবিশ’।
এই গালি তিনি প্রথম চালু করেন শেয়ারবাজারে সর্বস্বান্ত হওয়া ৩৩ লাখ অসহায় লগ্নিকারীর বিরুদ্ধে। সরকারের অব্যবস্থা ও অপব্যবস্থায় যারা রাতারাতি সব কিছু হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছিল, সেই শেয়ার ব্যবসায়ীরা তার দৃষ্টিতে ছিল টোটালি ‘রাবিশ’। তাদের তিনি জুয়াড়ি বলতেও ছাড়েননি।
বোধ করি এই গালমন্দ বাধাগ্রস্ত না হওয়ার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এবার এই গালিবর্ষণ করেছেন ড. ইউনূসের ওপর। বলেছেন ড. ইউনূসের বক্তব্য ‘রাবিশ’। এরপর ‘সরি’ বলে আবার জোর দেন তিনি, যা বলেছেন এটাই ঠিক।
এক হাত দেখিয়েছেন তিনি হিলারি ক্লিনটনকেও। কারণ হিলারি বলে গেছেন, ‘আমি মুহাম্মদ ইউনূস ও তার কাজকে সম্মান করি। আমি আশা করি, তার কাজ অব্যাহত থাকবে এবং সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে তা ব্যাহত হবে না। যদি হয়, তাহলে তা হবে দুঃখজনক।’
আসলে বাংলাদেশ সফরকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে হিলারি তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলে গেছেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিরোধের বিষয়টি আমি ওয়াশিংটন থেকেই নজর রাখছি। আমি শুধু আশা করতে পারি, এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য খর্বিত হয়।’ এরপর ড. ইউনূস নাকি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করার কথা বলেছেন।
ব্যস, আর যায় কোথায়? অর্থমন্ত্রী রেগে একেবারে টং। বলে বসলেন, হিলারির বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
এখন কেউ যদি মুখ ফসকে বলে বসে, সবাইকে ‘রাবিশ’ বলে বলে তিনি নিজে একটা মূর্তিমান ‘রাবিশে’ পরিণত হয়েছেন। তাহলে উপায় কি?
সৈয়দ আশরাফের অভূতপূর্ব আবিষ্কার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের ঋণ কোনোদিন শেষ হওয়ার নয়। তার কাছে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। অভূতপূর্ব দুটি অনন্যসাধারণ আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে অপার আনন্দে ভাসিয়েছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রাপ্ত পর্যন্ত তার এই আবিষ্কারের আনন্দ ঢেউ খেলে খেলে বেড়াচ্ছে।
তার প্রথম আবিষ্কারের দুটি অংশ। প্রথমাংশে তিনি জ্ঞানতাপস ড. শহীদুল্লাহর চাইতেও দৃঢ়তা নিয়ে ড. ইউনূসের বেসিক সাবজেক্ট অর্থনীতি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট করলেন একজন কিন্তু অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেলেন না। নোবেল পেলেন কোথায়? পেলেন শান্তিতে। কোন যুদ্ধে উনি শান্তি আনলেন? কোন মহাদেশে উনি শান্তি আনছেন?’
অর্থাত্ যুদ্ধ না থামালে শান্তি পুরস্কার পাওয়া যায় না। এই যে আবিষ্কার, এর দ্বিতীয়াংশে আছে আয়ারল্যান্ডের ‘মাদারল্যান্ড পিস’ নামীয় এক সংগঠনের দুই মহিলা নাকি সংগঠন করার দুই মাসের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পান শান্তিতে। তারপর টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই মহিলার মধ্যে ঝগড়া বাধে। তিন মাসের মধ্যে এই ঝগড়া আদালতে গড়ায়। শান্তির কর্ম কাবার। দ্বিতীয়াংশের এই আবিষ্কারটিও অসাধারণ। কারণ সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের পর অনেকেই নোবেল কমিটি ও আয়ারল্যান্ডে যোগাযোগ করে এরকম সংগঠন ও নোবেল পাওয়ার কোনো আলামত খুঁজে পাননি। কিন্তু তাতে কী? তাতে তো এই আবিষ্কারের মর্যাদা খাটো হয়ে যায় না!
সৈয়দ আশরাফের দুই নম্বর আবিষ্কারটি সত্যিকারের আবিষ্কার। আবিষ্কারের বাচ্চা আবিষ্কার। বাঘের বাচ্চা আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি চিরকাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। যে পুরস্কার পাওয়ার জন্য সারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় মানুষ মুখিয়ে থাকে, সেই নোবেল কীভাবে পাওয়া যায়, তা তিনি আবিষ্কার করে সবাইকে চমত্কৃত, বিস্মিত ও হতভম্ব করে ফেলেছেন। হার্টের জোর যাদের কম তাদের অনেকে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। এমন একটা সামান্য বিষয় আমরা জানতাম না বলে বিশ্বের দেশে দেশে অনেক জ্ঞানীগুণী টেবিলে, দেয়ালে, ইলেকট্রিকের থাম্বায় মাথা আছড়াচ্ছেন।
এবার তার সেই মহান আবিষ্কারটি তুলে ধরছি। নোবেল কীভাবে আসে তা আমাদের এখানে অনেকেই জানেন মন্তব্য করে বলেছেন, ‘নোবেল কীভাবে দেয়া হয়, কীভাবে আসে, কেন দেয়া হয়—সে বিষয়ে আমারও অনেক অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্বের কিছু দেশ আছে যেখানে গিয়ে চিপস, স্যান্ডউইচ আর হোয়াইট ওয়াইন খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে। সময়মত নোবেল প্রাইজ পাওয়া যায়।’
সৈয়দ আশরাফের এই মহা মহা আবিষ্কারে আমার মতো অনেকেরই হয়তো দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল। কারণ তিনি শুধু আবিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি। বলেছেন, এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতাও আছে। কী আশ্চর্য, আমাদের হাতের কাছে, ঘরের ভেতরে এমন একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক আছেন তা এদ্দিন আমরা জানতেও পারিনি! পোড়া কপাল আর কাকে বলে!
দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফের কাছে আমাদের কাতর অনুরোধ, দোহাই আল্লাহর, এবার দয়া করে জানিয়ে দেন, কোন কোন দেশে গিয়ে চিপস, স্যান্ডউইচ আর সাদা মদ খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে, যা আখেরে জুটিয়ে দেবে নোবেল।
আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, দরখাস্ত—যে আবিষ্কার আপনি করে ফেলেছেন, তা বাংলাদেশের কল্যাণে উত্সর্গ করুন। বিশ্ব মানবতার সেবায় উত্সর্গ করুন। দয়া করে আপনি, ‘নোবেলপ্রাপ্তির সহজ উপায়’ অথবা নিজের নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘আশরাফিয়া নোবেলপ্রাপ্তির কোচিং সেন্টার’ খুলুন। আমরা যে যে দলই করি না কেন, সবাই মিলে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে আপনাকে সেই সেন্টারের ‘প্রিন্সিপাল’-এর চেয়ারে বসিয়ে মানবজনম সার্থক করবো।
আপনার সেই কোচিং সেন্টারে গিয়ে আমরা যারা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য পাগল, উন্মাদ, বেহুঁশ ও বেসামাল হয়ে আছি, তারা কোচিং নেব। তারপর দেশের শহরবন্দর, গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে নোবেল পুরস্কার ঢুকিয়ে দেশ ও জাতিকে ধন্য করবো।
প্লিজ চুপ করে থাকবেন না, কোন কোন দেশে গিয়ে ‘মাল খেলে’ নোবেল পাওয়া যায় তা আমাদের বলুন। আমরা সেইসব দেশে গিয়ে ‘মাল খাওয়া কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার’ তা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব। অবশ্য আরও একটা উপকার হবে, আমাদের আদম ব্যাপারীরাও উড়োজাহাজ, জাহাজ, ট্রলার, কনটেইনারের খোল ভরে ভরে বঙ্গসন্তানদের ওইসব দেশে পাচার করে টু-পাইস কামাতে পারবে। দেশের অর্থনীতিতেও তা কাজ দেবে।
আবার শুধু দেশবাসী নয়, বিদেশিরাও আপনার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য বেহুঁশ হয়ে ছুটে আসবে। তাতে আমাদের আয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। প্রসার ঘটবে পর্যটন শিল্পেরও। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশের সুনাম। আর ‘অমর’ হবেন আপনি।
দুই কান কাটা কাণ্ড : দিলীপের দড়াবাজি
বড় বড় মন্ত্রী-নেতাদের কারবার দেখে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চুপ থাকেন কী করে? কুঁজোরও তো ইচ্ছে করে চিত্ হয়ে শুতে। ডান কান কাটা হাঁটে পথের ডান দিক ঘেঁষে। বাম কান কাটা হাঁটে পথের বাম ঘেঁষে। আর যার দুই কানই কাটা সে হাঁটে নাকি পথের মাঝ দিয়ে, বুক টান করে। অতএব মহাজোট সরকারের সঙ্গী বিশিষ্ট রাজনৈতিক এতিম, ‘তিন নম্বর বাচ্চা’ দিলীপ বড়ুয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরে পড়ার মওকা মিস করেন কী করে? ড. ইউনূসের গুষ্ঠি নিকাশের কাজে তিনি নাম লেখালেন।
এর আগে তিনি বলেছেন, উন্নয়নের ঠেলায় নাকি দেশে ফকির উঠে গেছে। সবাই সচ্ছল হয়ে গেছে। এই রাজনৈতিক সর্বহারা সারাক্ষণ থাকে পুলিশ আর অফিসারবেষ্টিত। তো তার আশপাশে ফকির আসবে কোত্থেকে। কিন্তু এই মন্ত্রী মহোদয়কে তা বোঝাবে কে? তিনি তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় বুঝে নিলেন দেশে এখন আর ফকির নেই।
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার রাজনৈতিক দর্শন ও অবস্থানের সঙ্গে গাদ্দারি করে দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রী হয়েছেন। মান্নান ভূঁইয়া আর প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের দয়ায় যার নাকি জীবিকা নির্বাহ হতো। তিনি রাতারাতি মন্ত্রী বনে ধরাকে সরা জ্ঞান করতেই পারেন। আবার বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে চীনও ঘুরে এসেছিলেন।
কিন্তু শিল্প দফতরের মন্ত্রী হওয়ার পরও তাকে নিয়ে কোথাও তেমন হৈচৈ নেই দেখে বোধ করি তার মন খারাপ থাকতো সবসময়। গ্রামেগঞ্জে একটা কথা আছে, পতিতার যখন বয়স বেড়ে যায়, সে হয়ে যায় খালা। কেউ আর তার দিকে তাকায় না। সঙ্গত কারণেই তার মন খারাপ থাকে। কেউ যাতে তার দিকে তাকায়, কেউ তাকে একটা গাল দেয়, সেই আশায় সে কি করে, পথের মাঝখানে মলত্যাগ করে। কোনো ব্যক্তি যদি অন্যমনস্কতাবশত সেই মলের ওপর পা দেয়, তো সে রেগেমেগে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি করে। এই দৃশ্য আড়াল থেকে দেখে ‘খালা’ নাকি প্রাণ খুলে হাসে। বলে, যাক এখনও লোকেরা তাহলে আমাকে মনে রেখেছে।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া যিনি তিন-তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ১২০০-এর মতো। যার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রতিবার, সেই ‘মহা জনপ্রিয়’ দিলীপ বড়ুয়া ড. ইউনূসকে ছুড়ে দিলেন কঠিন চ্যালেঞ্জ(!), ‘তত্ত্বাবধায়ক যদি এতই ভালো লাগে তাহলে রাজনীতিতে আসুন। রাজনীতিতে এসে নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে তারপর কথা বলুন।’—বুঝুন ঠেলা!
বেরসিক ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
আমাদের কর্তাদের এইসব মন্তব্য, ভাষণ শুনে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মতোই বিরক্ত হন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক উল হক। তিনি গত ১২ মে এক আলোচনা সভায় বলেই ফেললেন, ‘একটি বড় দলের নেতা ও মন্ত্রী যদি মনে করেন শান্তিতে নোবেল পেতে হলে যুদ্ধ থামাতে হবে, তাহলে বোঝেন আমরা কত বড় বেকুবের দেশে আছি।’
দিলীপ বড়ুয়া প্রসঙ্গে বললেন, ‘তিনি ড. ইউনূসের নখের সমান হওয়ার যোগ্যও নন। একজন মন্ত্রী যদি বেকুবের মতো কথা বলেন তাহলে তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হয় না।’ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর বলেন, ‘একজন মানি লোককে এভাবে অপমান করার চেয়ে আর জঘন্য কিছু হতে পারে না।’
ব্যারিস্টার রফিক উল হকের এই মন্তব্য প্রচারের পর অন্যরা খামোশ হলেও দিলীপ বড়ুয়াকে থামায় কে? তিনি তো সর্বহারা! তার তো মন্ত্রিত্বটুকু ছাড়া আর হারাবার কিছু নেই। সেজন্য আবার উচ্চকণ্ঠ হলেন। বললেন, ‘ইউনূসের মতো রক্তচোষা নই আমি।’
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা যারা বলে তাদের চিহ্নিত করার জন্য বাংলা অভিধানে শব্দ আছে। সে সব শব্দ দিলীপ বড়ুয়ার ব্যাপারে ব্যবহার করলেই কি আর না করলেই কি? তার তো কিছু আসে যায় না।
সেজন্যই এই বেপরোয়া মন্ত্রী মহোদয় আবার বেপরোয়ার মতো কথা বলতে শুরু করেছেন। তবে এবারের টার্গেট ড. ইউনূস নন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যারা টকশোতে অংশ নেন সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘টকশোধারীরা জেগে ঘুমান।’ তিনি তাদের ‘অন্ধ’ আখ্যায়িত করে বলেন, সেজন্যই তারা সরকারের উন্নয়ন দেখতে পান না।...তারা অদৃশ্য শক্তির ওপর ভর করে ক্ষমতায় বসতে চায়। তবে দেশের জনগণ তা হতে দেবে না।
উপসংহার
পর পর পাঁচবার ছেলে ফেল করেছে এসএসসি পরীক্ষায়। ষষ্ঠবার পরীক্ষার পর ছেলে যাচ্ছে রেজাল্ট আনতে। বাপ জব্বার মিয়া ডেকে বললো, শোন, এবার যদি ফেল করিস তাহলে ফিরে এসে আমাকে আর আব্বা বলে ডাকবি না। মনে থাকবে?
ছেলে মাথা নেড়ে বললো, জ্বি মনে থাকবে।
দুপুরে যথারীতি বিফল পুত্র বাড়ি ফিরে বাপকে খবরটা দেয়ার জন্য ডাকতে শুরু করলো, জব্বার মিয়া, ও জব্বার মিয়া—
রেগেমেগে ঘর থেকে বাইরে এসে জব্বার মিয়া ছেলেকে বললো, কিরে হারামজাদা, বাপকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করেছিস...
ছেলে বললো, কী করবো, আপনিই তো বলে দিয়েছেন।
প্রিয় পাঠক, আমাদের ইউনূসবধ কাব্য দ্বিতীয় পর্বের এখানেই সমাপ্তি। আশা করি আমরা সবাই আগামী দিনগুলোকে চোখ মেলে দেখার জন্য আয়ু পাব।
a_hyesikder@yahoo.com