আ ব দু ল হা ই শি ক দা র
দ্বাদশ পর্ব
হায়দারাবাদের ওপর ভারতীয় আক্রমণ শুরুর চতুর্থ দিন। হায়দারাবাদের অবনতিশীল পরিস্থিতি, নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা, বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়, মীর লায়েক আলীকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার জন্য নিজামের আহ্বান এবং অফিসারশূন্য আর্মি হেডকোয়ার্টারের বর্ণনাই আজকের পর্বের উপজীব্য। যথারীতি মীর লায়েক আলীর স্মৃতিচারণই আমাদের সবচেয়ে বড় অবলম্বন :
ভারতীয় বাহিনীর হায়দারাবাদ আক্রমণ ক্রমেই আন্তর্জাতিক খবরে রূপ নিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হিসেবে খবরগুলো ছাপা হতে লাগল। প্যারিসে আয়োজিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যেখানে কিনা ভারত এবং হায়দারাবাদ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা অবস্থান করছিল, সেখানে ভিড় জমল সাংবাদিকদের। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে দেখা গেল যে সাধারণ জনগণ ভারতের এই আচরণে ক্ষুব্ধ। এর প্রতিফলন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের মধ্যে ছিল খুবই প্রবল। দেখার বিষয় এই হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যে, প্রায় সব দেশের মানুষের মধ্যে বিষয়টিকে ঘিরে যে অসন্তোষমূলক ভাব বিরাজ করছিল, তার প্রভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে কোনো দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা।
এ বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্যারিসে আসতে শুরু করল এবং নিরাপত্তা পরিষদ শেষ পর্যন্ত হায়দারাবাদের বিষয়টি নিয়ে সভা ডাকল, যা নির্ধারিত করা হলো ১৬ সেপ্টেম্বর। অন্তর্বর্তীকালে মঈন নেওয়াজ জঙ্গ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন পরিষদের সব সদস্যের সঙ্গে একজন একজন করে হায়দারাবাদ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করে তাদের বোঝানোর জন্য। আলোচনায় দেখা গেল যে, চীন যারা কিনা ভারতকে সমর্থন করছিল এবং রাশিয়ার সদস্য বাদে অন্যান্য সব দেশের প্রতিনিধিরা ছিল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিনিধিরা রামস্বামীর নেতৃত্বে পর্দার আড়ালে থেকে যথেষ্ট সক্রিয়ভাবে তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছিল। শেষমেশ নিরাপত্তা পরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেবে তখনও তা বলা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল যে, বেশিরভাগ সদস্যই ভারতীয় আগ্রাসনের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সিরিয়া, আর্জেন্টিনা এবং কানাডার প্রতিনিধিরা, সবাই ছিলেন ভারতীয় আগ্রাসনের বিপক্ষে। ব্যতিক্রম ছিল চীন, যারা কিনা ভারতের পক্ষে কথা বলছিল এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছিলেন না।
এবার রণাঙ্গনের দিকে দৃকপাত করা যেতে পারে।
মুসী নদী পারাপারের সেতুটি ১৫ সেপ্টেম্বর উড়িয়ে দেয়ার আগেই সুরিয়াপেত থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে নদীর পশ্চিম তীরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হিমায়েত সাগর লেকের ফ্লাডগেট খুলে দেয়া হয় যাতে পূর্ব দিক থেকে আগত শত্রুপক্ষ সহজে সেতু পার হয়ে এগিয়ে আসতে সক্ষম না হয়। লেক এবং ব্রিজের মধ্যে দূরত্ব ছিল একশ’ মাইল এবং হিসাব করা হলো যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সেতুর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন দিন। যে পরিমাণ পানি দরকার ছিল নদীর তীর ডুবিয়ে দেয়ার জন্য সে পরিমাণ গভীরতা সৃষ্টি করতে গেলে লেকটি প্রায় শুকিয়ে যাবে। ফলে এই অপারেশনটির কিছু ক্ষতিকর দিকও ছিল। আমি সেনাবাহিনীর প্রধানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ফ্লাডগেট খুলে রাখা কি খুবই জরুরি। তার বক্তব্য তখনও ছিল জোরালো যে নদীর তীর ভাসিয়ে দেয়া উচিত। তিনি জানালেন, সব নীরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অবস্থান এখন নাকরাকালে। যাতে তারা সুরিয়াপেত ও দক্ষিণে মারিয়ালগুদা এবং নলদ্রাগ থেকে আসা শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করতে পারে। এতদসত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে ভাঙা সেতুটিতে কোনো প্রতিরক্ষা বাহিনী অবস্থান করছিল না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একটি সংবাদ এলো যে ভারতীয় বাহিনী ভাঙা সেতুটির স্থানে একটি অস্থায়ী সেতু বসাতে সক্ষম হয়েছে। তারা এগিয়ে আসছে। তখন সেনাপ্রধান বলল যে তাদের উচিত ছিল পশ্চিম তীরে কিছু নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা, যাতে তারা সেতু স্থাপন কাজে ভারতকে বাধা দিতে পারত। কিন্তু ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলাম যাতে হিমায়েত সাগর লেকের ফ্লাডগেট বন্ধ করে দেয়া হয়। হতাশার সঙ্গে সেনাপ্রধানকে বললাম, নাকারাকালের পূর্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় যতদূর সম্ভব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য।
১৬ সেপ্টেম্বরের সকালে ভারতের মূল বাহিনী বিদার ছাড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগল। দুপুরের মধ্যে তারা বিদার-জহিরাবাদ রাস্তা ধরে এগুতে লাগল। ততক্ষণে নিরাপত্তা বাহিনীর এক অংশ এবং টুয়েন্টি ফাইভ-পাউন্ডার বন্দুক এগুলো, যেগুলো কিনা পূর্বে হুমনাবাদে অবস্থান করছিল, সেগুলোকে সরিয়ে জহিরাবাদের পেছনে অবস্থান করানো হলো। এগুলো ছিল একজন ব্রিগেডিয়ারের কমান্ডের অধীনে। যাকে কিনা বিদারে অবস্থান করানো হয়েছিল। তাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল পাহাড়ি এলাকায় শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। এবং একজন সৈন্য জীবিত থাকা পর্যন্ত সেই স্থানের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। হুমনাবাদ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশিরভাগ অংশই সরিয়ে আনা হয়েছিল ভারতীয় মূল বাহিনীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। জহিরাবাদের ভৌগোলিক অবস্থা ছিল হুমনাবাদের মতোই ভালো। আশা করা হচ্ছিল যে, সঠিক সঠিক স্থানে সৈনিকদের দাঁড় করাতে পারলে ভারীধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।
আমি একবার সকালে এবং পরে দুপুরে নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তার মধ্যে যোগাযোগে অনিচ্ছুক একটা ব্যাপার কাজ করছিল। আগের দিন দুপুরে বেতার মাধ্যমে আমি ভারতের নেতাদের উদ্দেশ করে যে বার্তা সম্প্রচার করেছিলাম, তার কোনো জবাব দিল্লি থেকে সম্প্রচারিত কোনো মাধ্যমে আসছিল না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি দেখে নিজাম ধরেই নিয়েছিলেন, ভারতীয়রা আমার সম্প্রচারে সাড়া দেবে না। তিনি এ বিষয়েও একমত ছিলেন যে, এখন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো সেনাপত্যপূর্ণ বা রাজনৈতিক কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পাকিস্তান কি তখন এটা বুঝতে পারছিল না যে, যেহেতু ভারতের সিংহভাগ সামরিক শক্তি হায়দারাবাদে ব্যস্ত, সেই সুযোগে তাদের সামরিক বাহিনী অন্ততপক্ষে পাথানকোট-জম্মু রোড এবং সেতুর পুরোভাগ নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে পারে? যার ফলে পুরো কাশ্মীরকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যাবে। যাতে করে সেখানকার পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে চলে আসবে। এটার ফলে পাকিস্তানের অনেক সুবিধা হবে। নিজাম আমার সঙ্গে একমত হলেন। কিন্তু তাতে করে হায়দারাবাদের কোনো সুবিধা হবে না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম যে জিন্নাহর মৃত্যুর পর এত দ্রুত এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত কেউ নেই। আমিই একমাত্র কিছুটা আশাবাদী ছিলাম; আমি আশা করছিলাম যে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনো একটা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু নিজাম আমার সঙ্গে একমত ছিলেন না।
মন্ত্রিসভার একটি আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো পরিস্থিতি বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে এবং ধারণা করা হচ্ছিল যে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। আশা এবং হতাশার একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া মন্ত্রিসভায় উপলব্ধি করা যাচ্ছিল। সবাই সাগ্রহে অপেক্ষা করছিল নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য যা কিনা সেদিন বিকালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে। প্যারিস থেকে আসা সব সংবাদ যাতে করে সেনাপ্রধানের কাছে পৌঁছে যায় এবং এই মারাত্মক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাকে ভালোভাবেই জানিযে দেয়া হয়েছিল।
খবর এলো যে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষিণভাগ এগিয়ে আসছে এবং তারা পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর না হয়ে পশ্চিম দিকে মুখ নিয়েছে। তখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছিল না যে তারা কি নলদ্রাগ হয়ে মূল ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হবে, নাকি তারা পশ্চিমেই এগোতে থাকবে এবং দিওয়ারকোন্দ-হায়দ্রাবাদ রোডে গিয়ে উঠবে। ওই এলাকায় কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। আমি ঠিক করলাম যত দ্রুত সম্ভব রাজাকারদের একটি বাহিনী সেখানে পাঠাব। তাদের কিছু সুদক্ষ আর্মি অফিসারের আওতায় এনে সেখানে পাঠালে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাদের খাদ্য, যাতায়াত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থার দায়িত্ব দেয়া হলো কিছু বেসামরিক কর্মকর্তার হাতে, যারা প্রশংসনীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু কোনো ভারতীয় বাহিনী সেই অঞ্চলের দিকে এগুল না।
হায়দারাবাদের সেনাদের কাছে স্বল্পসংখ্যক ট্যাংক-মাইন ছিল এবং আমি আদেশ দিলাম সেগুলোকে জহিরাবাদ— হায়দ্রাবাদ রোড এবং নাকরাকাল-হায়দ্রাবাদ রোডে সুপরিকল্পিতভাবে পুঁতে রাখার জন্য। সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ আগেই সব রাস্তার, যেসব স্থান দিয়ে ট্যাংক আসতে পারে, সেখানে মাইন পুঁতে রাখার মানচিত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। এক আদেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কাজে লেগে গেলেন। পরদিন সকালের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়া হলো।
কাজ এতই বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন সময় বুঝি উড়ে চলে যাচ্ছে। নিজামের কাছ থেকে খবর এলো এবং তিনি যখন সম্ভব তার সঙ্গে আমাকে দেখা করার জন্য বলেছিলেন। আমি এরই মধ্যে দুইবার তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছিলাম। তার সঙ্গে তৃতীয়বার সাক্ষাত্ করার সুযোগ পেতে পেতে অনেক বিকাল হয়ে গেল। তবে পূর্ববর্তী সাক্ষাত্গুলোতে তাকে যেমন মনভোলা এবং উদাস দেখাচ্ছিল তার চাইতে অনেক ভালো দেখাচ্ছিল। আমি পরিস্থিতির সব তথ্যউপাত্ত তার সামনে পেশ করলাম। তার সঙ্গে আধ ঘণ্টা পর পর সেনাপ্রধানের যোগাযোগ হচ্ছিল। এবং আর্মি কমান্ডার তাকে সম্প্রতি ঘটিত সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই আমি তাকে জবাব দিলাম যে প্যারিসের সময় আমাদের সময়ের চেয়ে পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে এবং তাদের বৈঠক আরম্ভের আরও চার ঘণ্টা সময় বাকি আছে। তাকে জানালাম যে প্যারিসের কাছ থেকে খবর পেতে পেতে পরদিন সকাল হয়ে যাবে। কথাটি শুনে তিনি কিছু সময় চুপ হয়ে রইলেন। আমিও চুপ থাকলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার সব হিসাবই ভুল। পাকিস্তান নিশ্চুপ দর্শক হয়ে বসে আছে। আমাদের সৈন্যরা হতাশাজনকভাবে যুদ্ধ করছে। অপরদিকে ভারতীয় বাহিনী ধেয়ে আসছে রাজধানীর দিকে। নিরাপত্তা পরিষদের কোনো খবর নেই। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা এখন বিপর্যস্ত প্রায়। তিনি আমাকে বললেন সময় এসেছে আমার সঙ্গে দ্বিধাহীনভাবে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করার। তিনি বললেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই। সামনে পথ কেবল দুটি। প্রথমটি হলো আমি এবং আমার দ্বারা শাসিত সরকার ঘোষণা দেবে যে তারা রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব তাদের হাত থেকে ছেড়ে দিয়েছে। তখন তিনি সব দায়িত্ব নেবেন তার হাতে। তিনি তখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখবেন কী করা যায়। যতদূর সম্ভব ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বৈঠক করে কিছু একটা করবেন। অথবা আমি যদি একমত না হই তবে তিনি তার সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন, যা কিনা তখন আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভারতের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির কথা কি তিনি বিবেচনা করছেন? তিনি আমাকে শুধু এতটুকুই বললেন যে, তিনি তার বিচক্ষণতার আশ্রয় নেবেন। পরিস্থিতি বিবেচনার যতটুকু সম্ভব রক্ষার চেষ্টা করবেন। তিনি আরও কিছু বলে আমাকে বললেন নয়টার মধ্যে আমার মতামত তাকে জানাতে। যা কিনা হবে সুস্পষ্ট এবং চূড়ান্ত। আমি তাকে জানালাম যে, আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত ওই সময়ের মধ্যে দিতে পারব। কিন্তু সরকারি বিষয় এটা, সেহেতু রাত দশটা নাগাদ মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক আয়োজন করে পরেই তাকে অফিশিয়াল মতামত দিতে পারব। আমার কথায় তাকে একটু হতাশ দেখাল। কিন্তু তিনি রাজি হলেন শেষমেশ।
নিজামের সাথে সাক্ষাতের পর আমি বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলাম, আর্মি হেডকোয়ার্টারে পৌঁছেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েনিলাম যে, যাই ঠিক করব তা হবে বাস্তবসম্মত। নিজামকে ছাড়া পরিস্থিতির কী হবে তা নিয়ে ভাবলাম এবং ভেবে পেলাম যে পরিস্থিতি নিজামকে ছাড়া আরও দ্বিগুণ খারাপ হয়ে যাবে। সেরকম পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কী হবে এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া কেমন হবে? আমি কি নিশ্চিন্তে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে তার সঙ্গে বিষয়াদি নিয়ে শলাপরামর্শ করতে পারব? এসব বিষয়ই আমার মাথার মধ্যে তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল।
কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তখনও পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির খবর এসে আর্মি হেডকোয়ার্টারে পৌঁছেনি। সেনাপ্রধান কিছু সময়ের জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। এবং সেই সময় একজন স্টাফ অফিসারের সঙ্গে আমার কথোপকথন হলো। কথা বলে জানতে পারলাম যে তাদের সবার ধারণা এই যে, বর্তমান ধারার পরিস্থিতি যে গতিতে এগুচ্ছে, সেভাবে এগুতে থাকলে, আমাদের রাজধানীতে ভারতীয় বাহিনীর পৌঁছাতে অন্ততপক্ষে তিন দিন লাগবে। জানতে পারলাম যে তারা সবাই নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে কী আশা করা যায় তা জানতে আগ্রহী।
আর্মি কমান্ডার শিগগিরই ফিরে এলেন। জানালেন যে পূর্বদিকে আমাদের বাহিনী খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। যত দ্রুত আশা করা হয়েছিল তারচেয়েও দ্রুততরভাবে ভারতীয় বাহিনী এগিয়ে আসবে। তা পশ্চিম থেকে না হয়ে হবে পূর্ব থেকে। কাসেম রাজভীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হলো এবং তিনি জানালেন যে এখন পর্যন্ত এক হাজার রাজাকার আছে আমাদের সাহায্য করার জন্য। আমি সব রাজাকার এবং স্বেচ্ছাসেবক অসামরিক বাহিনীকে আদেশ দিলাম পূর্ব দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যেতে। শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য সেখানে মাইন পুঁতে রাখতে এবং বিভিন্ন স্থানে গর্ত খুঁড়ে রাখতে, যার পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখা হয়েছিল। এরপর আমি আর্মি কমান্ডার এবং তার স্টাফদের কাছ থেকে সেনা মোতায়েনের সুনির্দিষ্ট খবরাখবর নিলাম। পূর্বে জহিরাবাদের পাঘড়ি এলাকায় নতুন এইসব প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে এবং তারা একজন ব্রিগেডিয়ারের আওতায় কাজ করবেন; যিনি কিনা পূর্বে বিদারের যুদ্ধময়দানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আর্মি কমান্ডার তার কাজকর্ম দেখে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার সংবেদনশীলতা প্রশংসার যোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সব ডিফেন্ডিং ইউনিটকেই টিনের কৌটায় ভরা খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল যুদ্ধের শুরু থেকেই। তাদের গরম টাটকা খাবার সরবরাহ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছিল। অসামরিক কিছু স্বেচ্ছাসেবকের তত্ত্বাবধানে তাদের টাটকা খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আমার নিজের জন্য সামান্য সময় দরকার ছিল, নিজাম আমাকে যা বলেছেন তার একটি জবাব তাকে দেয়াটা ছিল জরুরি। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগের সময়ই বের করতে পারছিলাম না। অন্যদিকে জানতে পারলাম যে মুসতাক আহমেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কিছু গোপন সংবাদ ডিকোড করা হয়েছে, যা আমার জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছে। শাহ মঞ্জিলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যেখানে ডিকোডেড সংবাদ আমার জন্য রাখা ছিল, সেখানে পৌঁছে জানতে পারলাম যে নিজাম আমাকে তিনবার ফোন করেছিলেন। নিজাম আমাকে খুব জরুরিভাবে দেখা করতে বলেছেন। মুসতাক আহমেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মেসেজটির ওপর একবার চোখ বুলিয়েই আমি নিজামের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা দিলাম। ভাবছিলাম আমাকে বলার তার আর কিই-বা বাকি আছে।
সত্যিই তার আমাকে বলার তেমন কিছু ছিল না এবং তার জবাবে আমারও বলার তেমন কিছুই ছিল না। আমাদের আলাপ-আলোচনার মাঝে দুবার আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে তথ্য আসে যে যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আমাদের কথা বলার মাঝে কয়েকটি বিমান বেশ নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বিমানগুলো ভারতীয় বাহিনীর, নাকি আমাদের সরবরাহকারী বিমান বুঝতে পারছিলাম না। এরপর শুনতে পেলাম নিজামকে রক্ষাকারী বাহিনীর ব্রেনগানের আওয়াজ। নিজেদের বিমানের দিকেই আবার গুলি চালানো হচ্ছে কিনা ভেবে অস্বস্তি অনুভব করছিলাম।
নিজামের সঙ্গে বক্তব্য সেরে আমি আর্মি হেডকোয়ার্টারের দিকে রওনা হলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে নিজাম বিকালে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে আমার মতামত চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি কৌশলে সেই বিষয়টি এড়িয়ে সেখান থেকে বিদায় হলাম। নিরাপত্তা পরিষদের মতামত তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাব, একথা দিলাম।
নিজামের সঙ্গে এমন ব্যবহার আগে কখনও আমার দ্বারা হয়নি। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ওই বিষয় নিয়ে আলাপ করে আবেগময় হয়ে ওঠার সময় আমার হাতে ছিল না মোটেই। আর্মি হেডকোয়ার্টারে এসে দেখলাম সেটা আর আর্মি অফিসারদের জমায়েতস্থল হিসেবে টিকে নেই। সেখানে ছিল শুধু কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত অসামরিক ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন সরবরাহের তত্ত্বাবধানে ব্যস্ত ছিল এবং পূর্বে আলোচিত বিষয়গুলো নিয়েই আবারও আলোচনা করছিল। কাসেম রিজভী ব্যস্ত ছিল তার রাজাকার সদস্যদের ঠিকমত ঠিক গন্তব্যে পৌঁছান নিয়ে। এবং তার একটু পর পর আমার অভিমত নিচ্ছিলেন। তিনি সামরিক অবস্থা নিয়ে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। কিন্তু তাকে মোটেও ভীত দেখাচ্ছিল না। আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন।
a_hyesikder@yahoo.com
হায়দারাবাদের ওপর ভারতীয় আক্রমণ শুরুর চতুর্থ দিন। হায়দারাবাদের অবনতিশীল পরিস্থিতি, নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা, বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়, মীর লায়েক আলীকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার জন্য নিজামের আহ্বান এবং অফিসারশূন্য আর্মি হেডকোয়ার্টারের বর্ণনাই আজকের পর্বের উপজীব্য। যথারীতি মীর লায়েক আলীর স্মৃতিচারণই আমাদের সবচেয়ে বড় অবলম্বন :
ভারতীয় বাহিনীর হায়দারাবাদ আক্রমণ ক্রমেই আন্তর্জাতিক খবরে রূপ নিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হিসেবে খবরগুলো ছাপা হতে লাগল। প্যারিসে আয়োজিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যেখানে কিনা ভারত এবং হায়দারাবাদ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা অবস্থান করছিল, সেখানে ভিড় জমল সাংবাদিকদের। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে দেখা গেল যে সাধারণ জনগণ ভারতের এই আচরণে ক্ষুব্ধ। এর প্রতিফলন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের মধ্যে ছিল খুবই প্রবল। দেখার বিষয় এই হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যে, প্রায় সব দেশের মানুষের মধ্যে বিষয়টিকে ঘিরে যে অসন্তোষমূলক ভাব বিরাজ করছিল, তার প্রভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে কোনো দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা।
এ বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্যারিসে আসতে শুরু করল এবং নিরাপত্তা পরিষদ শেষ পর্যন্ত হায়দারাবাদের বিষয়টি নিয়ে সভা ডাকল, যা নির্ধারিত করা হলো ১৬ সেপ্টেম্বর। অন্তর্বর্তীকালে মঈন নেওয়াজ জঙ্গ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন পরিষদের সব সদস্যের সঙ্গে একজন একজন করে হায়দারাবাদ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করে তাদের বোঝানোর জন্য। আলোচনায় দেখা গেল যে, চীন যারা কিনা ভারতকে সমর্থন করছিল এবং রাশিয়ার সদস্য বাদে অন্যান্য সব দেশের প্রতিনিধিরা ছিল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিনিধিরা রামস্বামীর নেতৃত্বে পর্দার আড়ালে থেকে যথেষ্ট সক্রিয়ভাবে তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছিল। শেষমেশ নিরাপত্তা পরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেবে তখনও তা বলা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল যে, বেশিরভাগ সদস্যই ভারতীয় আগ্রাসনের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সিরিয়া, আর্জেন্টিনা এবং কানাডার প্রতিনিধিরা, সবাই ছিলেন ভারতীয় আগ্রাসনের বিপক্ষে। ব্যতিক্রম ছিল চীন, যারা কিনা ভারতের পক্ষে কথা বলছিল এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছিলেন না।
এবার রণাঙ্গনের দিকে দৃকপাত করা যেতে পারে।
মুসী নদী পারাপারের সেতুটি ১৫ সেপ্টেম্বর উড়িয়ে দেয়ার আগেই সুরিয়াপেত থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে নদীর পশ্চিম তীরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হিমায়েত সাগর লেকের ফ্লাডগেট খুলে দেয়া হয় যাতে পূর্ব দিক থেকে আগত শত্রুপক্ষ সহজে সেতু পার হয়ে এগিয়ে আসতে সক্ষম না হয়। লেক এবং ব্রিজের মধ্যে দূরত্ব ছিল একশ’ মাইল এবং হিসাব করা হলো যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সেতুর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন দিন। যে পরিমাণ পানি দরকার ছিল নদীর তীর ডুবিয়ে দেয়ার জন্য সে পরিমাণ গভীরতা সৃষ্টি করতে গেলে লেকটি প্রায় শুকিয়ে যাবে। ফলে এই অপারেশনটির কিছু ক্ষতিকর দিকও ছিল। আমি সেনাবাহিনীর প্রধানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ফ্লাডগেট খুলে রাখা কি খুবই জরুরি। তার বক্তব্য তখনও ছিল জোরালো যে নদীর তীর ভাসিয়ে দেয়া উচিত। তিনি জানালেন, সব নীরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অবস্থান এখন নাকরাকালে। যাতে তারা সুরিয়াপেত ও দক্ষিণে মারিয়ালগুদা এবং নলদ্রাগ থেকে আসা শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করতে পারে। এতদসত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে ভাঙা সেতুটিতে কোনো প্রতিরক্ষা বাহিনী অবস্থান করছিল না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একটি সংবাদ এলো যে ভারতীয় বাহিনী ভাঙা সেতুটির স্থানে একটি অস্থায়ী সেতু বসাতে সক্ষম হয়েছে। তারা এগিয়ে আসছে। তখন সেনাপ্রধান বলল যে তাদের উচিত ছিল পশ্চিম তীরে কিছু নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা, যাতে তারা সেতু স্থাপন কাজে ভারতকে বাধা দিতে পারত। কিন্তু ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলাম যাতে হিমায়েত সাগর লেকের ফ্লাডগেট বন্ধ করে দেয়া হয়। হতাশার সঙ্গে সেনাপ্রধানকে বললাম, নাকারাকালের পূর্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় যতদূর সম্ভব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য।
১৬ সেপ্টেম্বরের সকালে ভারতের মূল বাহিনী বিদার ছাড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগল। দুপুরের মধ্যে তারা বিদার-জহিরাবাদ রাস্তা ধরে এগুতে লাগল। ততক্ষণে নিরাপত্তা বাহিনীর এক অংশ এবং টুয়েন্টি ফাইভ-পাউন্ডার বন্দুক এগুলো, যেগুলো কিনা পূর্বে হুমনাবাদে অবস্থান করছিল, সেগুলোকে সরিয়ে জহিরাবাদের পেছনে অবস্থান করানো হলো। এগুলো ছিল একজন ব্রিগেডিয়ারের কমান্ডের অধীনে। যাকে কিনা বিদারে অবস্থান করানো হয়েছিল। তাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল পাহাড়ি এলাকায় শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। এবং একজন সৈন্য জীবিত থাকা পর্যন্ত সেই স্থানের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। হুমনাবাদ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশিরভাগ অংশই সরিয়ে আনা হয়েছিল ভারতীয় মূল বাহিনীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। জহিরাবাদের ভৌগোলিক অবস্থা ছিল হুমনাবাদের মতোই ভালো। আশা করা হচ্ছিল যে, সঠিক সঠিক স্থানে সৈনিকদের দাঁড় করাতে পারলে ভারীধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।
আমি একবার সকালে এবং পরে দুপুরে নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তার মধ্যে যোগাযোগে অনিচ্ছুক একটা ব্যাপার কাজ করছিল। আগের দিন দুপুরে বেতার মাধ্যমে আমি ভারতের নেতাদের উদ্দেশ করে যে বার্তা সম্প্রচার করেছিলাম, তার কোনো জবাব দিল্লি থেকে সম্প্রচারিত কোনো মাধ্যমে আসছিল না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি দেখে নিজাম ধরেই নিয়েছিলেন, ভারতীয়রা আমার সম্প্রচারে সাড়া দেবে না। তিনি এ বিষয়েও একমত ছিলেন যে, এখন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো সেনাপত্যপূর্ণ বা রাজনৈতিক কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পাকিস্তান কি তখন এটা বুঝতে পারছিল না যে, যেহেতু ভারতের সিংহভাগ সামরিক শক্তি হায়দারাবাদে ব্যস্ত, সেই সুযোগে তাদের সামরিক বাহিনী অন্ততপক্ষে পাথানকোট-জম্মু রোড এবং সেতুর পুরোভাগ নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে পারে? যার ফলে পুরো কাশ্মীরকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যাবে। যাতে করে সেখানকার পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে চলে আসবে। এটার ফলে পাকিস্তানের অনেক সুবিধা হবে। নিজাম আমার সঙ্গে একমত হলেন। কিন্তু তাতে করে হায়দারাবাদের কোনো সুবিধা হবে না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম যে জিন্নাহর মৃত্যুর পর এত দ্রুত এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত কেউ নেই। আমিই একমাত্র কিছুটা আশাবাদী ছিলাম; আমি আশা করছিলাম যে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনো একটা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু নিজাম আমার সঙ্গে একমত ছিলেন না।
মন্ত্রিসভার একটি আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো পরিস্থিতি বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে এবং ধারণা করা হচ্ছিল যে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। আশা এবং হতাশার একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া মন্ত্রিসভায় উপলব্ধি করা যাচ্ছিল। সবাই সাগ্রহে অপেক্ষা করছিল নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য যা কিনা সেদিন বিকালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে। প্যারিস থেকে আসা সব সংবাদ যাতে করে সেনাপ্রধানের কাছে পৌঁছে যায় এবং এই মারাত্মক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাকে ভালোভাবেই জানিযে দেয়া হয়েছিল।
খবর এলো যে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষিণভাগ এগিয়ে আসছে এবং তারা পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর না হয়ে পশ্চিম দিকে মুখ নিয়েছে। তখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছিল না যে তারা কি নলদ্রাগ হয়ে মূল ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হবে, নাকি তারা পশ্চিমেই এগোতে থাকবে এবং দিওয়ারকোন্দ-হায়দ্রাবাদ রোডে গিয়ে উঠবে। ওই এলাকায় কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। আমি ঠিক করলাম যত দ্রুত সম্ভব রাজাকারদের একটি বাহিনী সেখানে পাঠাব। তাদের কিছু সুদক্ষ আর্মি অফিসারের আওতায় এনে সেখানে পাঠালে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাদের খাদ্য, যাতায়াত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থার দায়িত্ব দেয়া হলো কিছু বেসামরিক কর্মকর্তার হাতে, যারা প্রশংসনীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু কোনো ভারতীয় বাহিনী সেই অঞ্চলের দিকে এগুল না।
হায়দারাবাদের সেনাদের কাছে স্বল্পসংখ্যক ট্যাংক-মাইন ছিল এবং আমি আদেশ দিলাম সেগুলোকে জহিরাবাদ— হায়দ্রাবাদ রোড এবং নাকরাকাল-হায়দ্রাবাদ রোডে সুপরিকল্পিতভাবে পুঁতে রাখার জন্য। সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ আগেই সব রাস্তার, যেসব স্থান দিয়ে ট্যাংক আসতে পারে, সেখানে মাইন পুঁতে রাখার মানচিত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। এক আদেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কাজে লেগে গেলেন। পরদিন সকালের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়া হলো।
কাজ এতই বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন সময় বুঝি উড়ে চলে যাচ্ছে। নিজামের কাছ থেকে খবর এলো এবং তিনি যখন সম্ভব তার সঙ্গে আমাকে দেখা করার জন্য বলেছিলেন। আমি এরই মধ্যে দুইবার তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছিলাম। তার সঙ্গে তৃতীয়বার সাক্ষাত্ করার সুযোগ পেতে পেতে অনেক বিকাল হয়ে গেল। তবে পূর্ববর্তী সাক্ষাত্গুলোতে তাকে যেমন মনভোলা এবং উদাস দেখাচ্ছিল তার চাইতে অনেক ভালো দেখাচ্ছিল। আমি পরিস্থিতির সব তথ্যউপাত্ত তার সামনে পেশ করলাম। তার সঙ্গে আধ ঘণ্টা পর পর সেনাপ্রধানের যোগাযোগ হচ্ছিল। এবং আর্মি কমান্ডার তাকে সম্প্রতি ঘটিত সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই আমি তাকে জবাব দিলাম যে প্যারিসের সময় আমাদের সময়ের চেয়ে পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে এবং তাদের বৈঠক আরম্ভের আরও চার ঘণ্টা সময় বাকি আছে। তাকে জানালাম যে প্যারিসের কাছ থেকে খবর পেতে পেতে পরদিন সকাল হয়ে যাবে। কথাটি শুনে তিনি কিছু সময় চুপ হয়ে রইলেন। আমিও চুপ থাকলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার সব হিসাবই ভুল। পাকিস্তান নিশ্চুপ দর্শক হয়ে বসে আছে। আমাদের সৈন্যরা হতাশাজনকভাবে যুদ্ধ করছে। অপরদিকে ভারতীয় বাহিনী ধেয়ে আসছে রাজধানীর দিকে। নিরাপত্তা পরিষদের কোনো খবর নেই। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা এখন বিপর্যস্ত প্রায়। তিনি আমাকে বললেন সময় এসেছে আমার সঙ্গে দ্বিধাহীনভাবে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করার। তিনি বললেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই। সামনে পথ কেবল দুটি। প্রথমটি হলো আমি এবং আমার দ্বারা শাসিত সরকার ঘোষণা দেবে যে তারা রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব তাদের হাত থেকে ছেড়ে দিয়েছে। তখন তিনি সব দায়িত্ব নেবেন তার হাতে। তিনি তখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখবেন কী করা যায়। যতদূর সম্ভব ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বৈঠক করে কিছু একটা করবেন। অথবা আমি যদি একমত না হই তবে তিনি তার সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন, যা কিনা তখন আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভারতের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির কথা কি তিনি বিবেচনা করছেন? তিনি আমাকে শুধু এতটুকুই বললেন যে, তিনি তার বিচক্ষণতার আশ্রয় নেবেন। পরিস্থিতি বিবেচনার যতটুকু সম্ভব রক্ষার চেষ্টা করবেন। তিনি আরও কিছু বলে আমাকে বললেন নয়টার মধ্যে আমার মতামত তাকে জানাতে। যা কিনা হবে সুস্পষ্ট এবং চূড়ান্ত। আমি তাকে জানালাম যে, আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত ওই সময়ের মধ্যে দিতে পারব। কিন্তু সরকারি বিষয় এটা, সেহেতু রাত দশটা নাগাদ মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক আয়োজন করে পরেই তাকে অফিশিয়াল মতামত দিতে পারব। আমার কথায় তাকে একটু হতাশ দেখাল। কিন্তু তিনি রাজি হলেন শেষমেশ।
নিজামের সাথে সাক্ষাতের পর আমি বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলাম, আর্মি হেডকোয়ার্টারে পৌঁছেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েনিলাম যে, যাই ঠিক করব তা হবে বাস্তবসম্মত। নিজামকে ছাড়া পরিস্থিতির কী হবে তা নিয়ে ভাবলাম এবং ভেবে পেলাম যে পরিস্থিতি নিজামকে ছাড়া আরও দ্বিগুণ খারাপ হয়ে যাবে। সেরকম পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কী হবে এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া কেমন হবে? আমি কি নিশ্চিন্তে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে তার সঙ্গে বিষয়াদি নিয়ে শলাপরামর্শ করতে পারব? এসব বিষয়ই আমার মাথার মধ্যে তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল।
কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তখনও পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির খবর এসে আর্মি হেডকোয়ার্টারে পৌঁছেনি। সেনাপ্রধান কিছু সময়ের জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। এবং সেই সময় একজন স্টাফ অফিসারের সঙ্গে আমার কথোপকথন হলো। কথা বলে জানতে পারলাম যে তাদের সবার ধারণা এই যে, বর্তমান ধারার পরিস্থিতি যে গতিতে এগুচ্ছে, সেভাবে এগুতে থাকলে, আমাদের রাজধানীতে ভারতীয় বাহিনীর পৌঁছাতে অন্ততপক্ষে তিন দিন লাগবে। জানতে পারলাম যে তারা সবাই নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে কী আশা করা যায় তা জানতে আগ্রহী।
আর্মি কমান্ডার শিগগিরই ফিরে এলেন। জানালেন যে পূর্বদিকে আমাদের বাহিনী খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। যত দ্রুত আশা করা হয়েছিল তারচেয়েও দ্রুততরভাবে ভারতীয় বাহিনী এগিয়ে আসবে। তা পশ্চিম থেকে না হয়ে হবে পূর্ব থেকে। কাসেম রাজভীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হলো এবং তিনি জানালেন যে এখন পর্যন্ত এক হাজার রাজাকার আছে আমাদের সাহায্য করার জন্য। আমি সব রাজাকার এবং স্বেচ্ছাসেবক অসামরিক বাহিনীকে আদেশ দিলাম পূর্ব দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যেতে। শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য সেখানে মাইন পুঁতে রাখতে এবং বিভিন্ন স্থানে গর্ত খুঁড়ে রাখতে, যার পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখা হয়েছিল। এরপর আমি আর্মি কমান্ডার এবং তার স্টাফদের কাছ থেকে সেনা মোতায়েনের সুনির্দিষ্ট খবরাখবর নিলাম। পূর্বে জহিরাবাদের পাঘড়ি এলাকায় নতুন এইসব প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে এবং তারা একজন ব্রিগেডিয়ারের আওতায় কাজ করবেন; যিনি কিনা পূর্বে বিদারের যুদ্ধময়দানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আর্মি কমান্ডার তার কাজকর্ম দেখে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার সংবেদনশীলতা প্রশংসার যোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সব ডিফেন্ডিং ইউনিটকেই টিনের কৌটায় ভরা খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল যুদ্ধের শুরু থেকেই। তাদের গরম টাটকা খাবার সরবরাহ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছিল। অসামরিক কিছু স্বেচ্ছাসেবকের তত্ত্বাবধানে তাদের টাটকা খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আমার নিজের জন্য সামান্য সময় দরকার ছিল, নিজাম আমাকে যা বলেছেন তার একটি জবাব তাকে দেয়াটা ছিল জরুরি। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগের সময়ই বের করতে পারছিলাম না। অন্যদিকে জানতে পারলাম যে মুসতাক আহমেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কিছু গোপন সংবাদ ডিকোড করা হয়েছে, যা আমার জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছে। শাহ মঞ্জিলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যেখানে ডিকোডেড সংবাদ আমার জন্য রাখা ছিল, সেখানে পৌঁছে জানতে পারলাম যে নিজাম আমাকে তিনবার ফোন করেছিলেন। নিজাম আমাকে খুব জরুরিভাবে দেখা করতে বলেছেন। মুসতাক আহমেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মেসেজটির ওপর একবার চোখ বুলিয়েই আমি নিজামের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা দিলাম। ভাবছিলাম আমাকে বলার তার আর কিই-বা বাকি আছে।
সত্যিই তার আমাকে বলার তেমন কিছু ছিল না এবং তার জবাবে আমারও বলার তেমন কিছুই ছিল না। আমাদের আলাপ-আলোচনার মাঝে দুবার আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে তথ্য আসে যে যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আমাদের কথা বলার মাঝে কয়েকটি বিমান বেশ নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বিমানগুলো ভারতীয় বাহিনীর, নাকি আমাদের সরবরাহকারী বিমান বুঝতে পারছিলাম না। এরপর শুনতে পেলাম নিজামকে রক্ষাকারী বাহিনীর ব্রেনগানের আওয়াজ। নিজেদের বিমানের দিকেই আবার গুলি চালানো হচ্ছে কিনা ভেবে অস্বস্তি অনুভব করছিলাম।
নিজামের সঙ্গে বক্তব্য সেরে আমি আর্মি হেডকোয়ার্টারের দিকে রওনা হলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে নিজাম বিকালে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে আমার মতামত চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি কৌশলে সেই বিষয়টি এড়িয়ে সেখান থেকে বিদায় হলাম। নিরাপত্তা পরিষদের মতামত তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাব, একথা দিলাম।
নিজামের সঙ্গে এমন ব্যবহার আগে কখনও আমার দ্বারা হয়নি। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ওই বিষয় নিয়ে আলাপ করে আবেগময় হয়ে ওঠার সময় আমার হাতে ছিল না মোটেই। আর্মি হেডকোয়ার্টারে এসে দেখলাম সেটা আর আর্মি অফিসারদের জমায়েতস্থল হিসেবে টিকে নেই। সেখানে ছিল শুধু কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত অসামরিক ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন সরবরাহের তত্ত্বাবধানে ব্যস্ত ছিল এবং পূর্বে আলোচিত বিষয়গুলো নিয়েই আবারও আলোচনা করছিল। কাসেম রিজভী ব্যস্ত ছিল তার রাজাকার সদস্যদের ঠিকমত ঠিক গন্তব্যে পৌঁছান নিয়ে। এবং তার একটু পর পর আমার অভিমত নিচ্ছিলেন। তিনি সামরিক অবস্থা নিয়ে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। কিন্তু তাকে মোটেও ভীত দেখাচ্ছিল না। আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন।
a_hyesikder@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন