শনিবার, ৯ জুন, ২০১২

জসীমউদ্দীনের ‘মাইনক্যা’ : ‘অজ্ঞ রাষ্ট্রদ্রোহী’ স্পিকার ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত স্যাডিস্ট’ বিচারপতি



আবদুল হাই শিকদার
এক
জনগণ শিহরিত। কম্পিত। আতঙ্কিত। স্তম্ভিত। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সুপ্রিমকোর্ট ও জাতীয় সংসদের দ্বন্দ্ব দেখে তারা বিব্রত, বিচলিত, হতাশ। দেশে হচ্ছেটা কি?
সড়ক ভবন নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে ২৯ মে জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছিলেন, সরকার, সংসদ ও বিচার বিভাগ যে কোনো প্রতিষ্ঠান সীমা লঙ্ঘন করলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন, আদালত নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। কিন্তু দেশের মানুষের বিচারের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর লেগে যাবে আর নিজেদের বিষয় বলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা ভালো দেখায় না। কেবল নিজেদের বিষয়টি দেখলে সরকার কীভাবে চলবে? সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে।
এই বক্তব্যের পর যথারীতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বিষয়টি আদালতের গোচরে আনলে বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী যা বলেন তার সারসংক্ষেপ হলো, এটা হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। স্পিকার সুপ্রিমকোর্টের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকানি দিয়েছেন। তার বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। স্পিকার তার পদের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। ওই পদে থাকার অধিকার তার নেই। স্পিকারের মন্তব্য আনপ্রিসিডেন্টেড। তিনি একজন আইনজীবী। তার তো অ্যাডভোকেট পদ ব্যবহার করা উচিত নয়। স্পিকারের মনে হয় বিচার বিভাগ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। স্পিকার তার অজ্ঞতা দেখিয়েছেন। একজন স্পিকার এত অজ্ঞ হতে পারেন, তা আমরা ভাবতে পারি না। স্পিকারের বক্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয়, তার বক্তব্য অমার্জনীয়। (স্পিকার সংসদের প্রতীক) ওই প্রতীক হতে হলে যোগ্যতা থাকতে হয়। পড়ালেখা জানতে হয়। এটা হলো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর।
বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর এই বক্তব্যের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সংসদ সদস্যরা। তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সার্বভৌম সংসদের ওপর হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী মানিক হাইকোর্টের বিচারপতি হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের দয়ায়। কোনো লিখিত পরীক্ষা ও যোগ্যতা ছাড়াই তিনি বিচারপতি হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার গত আমলে এ লোককে যোগ্যতা ছাড়া, পরীক্ষা ছাড়া হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ করেছে। এ ব্যক্তি বিচারক হওয়ার পর সারাদেশের সচিব, আইজিসহ যত ভদ্রলোক আছেন তাদের সামান্য কারণে হাইকোর্টে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বেইজ্জতি করেন। এ বিচারপতি সেই ব্যক্তি-যিনি বিমানে সামনের আসনে বসার জন্য বিমানের এমডিকে হাইকোর্টে ডেকে বেইজ্জতি করেছেন। এই ব্যক্তি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তিনি কোনো সুস্থ মানুষ নন।
শামসুদ্দিন মানিক ভাগ্যবান। আমাদের আবদুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে তাকে বিচারক করেছেন। বিএনপি তাকে কনফার্ম করেনি। আমরা এবার ক্ষমতায় আসার পর তাকে কনফার্ম করেছি। তিনি আজ আমাদের বিরুদ্ধে, পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন। আর একজন আইনজীবী আছেন মনজিল মোরশেদ। তার কোনো কাজ নেই। খবরের কাগজ পড়ে শামসুদ্দিন মানিকের কাছে যান এবং তিনি রুল ইস্যু করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় আমরাই স্লোগান তুলেছিলাম, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। এ স্লোগানে প্রতিরোধ গড়ার পর আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতি লুঙ্গি পরে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
শামসুদ্দিন মানিক একজন স্যাডিস্ট। তিনি মানুষকে অপমান করে মজা পান। তা না হলে একজন ট্রাফিক পুলিশ, যিনি হয়তো তাকে দেখেননি, স্যালুট না দেয়ায় গাড়ি থেকে নেমে তাকে কানে ধরে উঠবস করিয়েছেন। ইত্যাদি।
জাতীয় সংসদ ও উচ্চ আদালতের এ ধরনের মুখোমুখি অবস্থান আমাদের দেশে অভূতপূর্ব। শাসকগোষ্ঠীর নানা কুকীর্তি, দুর্নীতি, ঔদ্ধত্য ও সীমা লঙ্ঘনের কালচার এবং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার প্রতিফলন ঘটেছে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে। তাদের অন্তর্গত বিরোধ বহুদিন থেকেই ফুঁসছিল। এবার সেই বিরোধ ফুলে-ফেঁপে পেকে বিস্ফোরিত হয়েছে। আর এর দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় জীবনের সর্বত্র। আর হতবাক জনগণকে শুনতে হচ্ছে তাদের সংসদ পরিচালিত হচ্ছে একজন ‘অজ্ঞ রাষ্ট্রদ্রোহী’ স্পিকার দ্বারা আর বিচারব্যবস্থা পড়েছে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত স্যাডিস্ট’ বিচারপতির খপ্পরে।
এখন এই বিচারপতিকে ইমপিচ করতে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে সংসদ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর দাবি উঠেছে। এই দাবির পর গত বুধবার এজলাশে বসেননি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনও চলে গেছে।
অবশ্য আশার কথা, সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, একজন বিচারকের দায় গোটা জুডিশিয়ারি বহন করতে পারে না।
আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রেরই বারোটা বাজিয়েছে এই সরকার। এক্ষেত্রে কি হয় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি কি? অন্যদিকে বলির পাঁঠার মতো কাঁপছে গণতন্ত্র।
দুই
১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মঞ্চে প্রথমবারের মতো অভিনীত হয় কবি জসীমউদ্দীনের অতি বিখ্যাত নাটক ‘বেদের মেয়ে’। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেন বহির্বিশ্বে।
আজকের লেখা শুরুর সময় আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা হাতড়ে দেখি বইটি নেই। শরণাপন্ন হলাম বাংলাবাজারের প্রকাশক বন্ধু এম আর মিলনের। তিনি বইটি জোগাড় করে তড়িঘড়ি আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। তাতেই রক্ষা হলো।
তো এই নাটকে একটি চরিত্র আছে ‘মানিক’ নামে। নাটকে যাকে বার বার ‘মাইনক্যা’ নামে ডাকা হয়। মাইনক্যা হাড়বজ্জাত। গ্রামের মোড়ল সাহেবের সব অপকর্মের দোসর। কখনও সে নিজে থেকেও মোড়লকে জড়িত করে নানা পাপে। আবার মোড়লও তাকে দিয়ে দেখিয়ে বেড়ায় নিজের ক্ষমতা।
এই মাইনক্যা একদিন খবর নিয়ে আসে মোড়লের কাছে। গ্রামে এবার যে বেদের বহর এসেছে তাদের মধ্যে ‘সুডৌল সোন্দর হলদে পঙ্খীর বাচ্চার মতো’ এক বাইদানী এসেছে। নাম চম্পা। মাইনক্যার প্ররোচনায় মোড়লের মাথায় ভর করে শয়তানি। বেদেদের সবাইকে ডেকে আনে মাইনক্যা মোড়ল সাহেবের বৈঠকখানায়। সেখানে বেদের সরদার চম্পা বাইদানীর স্বামী গয়া বেদেকে মোড়ল বলে, ‘শোন বাইদ্যা, তোমার বাইদানীরে আমি চাই।’
গয়া বেদে বললো, ‘মোড়ল সাহেব! আমরা বাইদ্যা জাত, ঘর নাই, বাড়ি নাই। দ্যাশে দ্যাশে ঘুইরা বেড়াই। পথের মা আমাগো মা, পথের বাপ আমাগো বাপ। ওমন কথা কইয়েন না। আপনাগো বল-ভরসাতেই আমরা ঘুইরা ফিরি।’
মোড়ল বললো, ‘দেখ বাইদ্যা। ওসব কাকুতি মিন্নতির কথা নয়। সুজা কথায় যদি তোমার বাইদানীরে দিয়া যাইবা ত দিয়া যাও, নইলে কি আমি করবার পারি—ক’ দেহি মাইনক্যা। ক’ ত?’
মাইনক্যা জানে তাকে কি বলতে হবে। সে উচ্চকণ্ঠে বললো, ‘মোড়ল সাব। আপনি কি করবার পারেন, তা কি আর কইতিই অবি? ওইত সেবার কুতুবদ্দি একটু তেড়িবেড়ি করছিল, তার বাড়িতি আগুন জ্বালায়া, ভিটার উপর নাঙ্গল চাষ্যা বাগুনির খ্যাত লাগায়া দিছিলেন; কুতুবুদ্দিরে পদ্মা নদীতে ফেইল্যা দিছিলেন; গাজনডাঙ্গার ছমিরদ্দি...’
চামচার বর্ণনায় তৃপ্ত মোড়ল গয়া বেদেকে বলে, ‘বুঝলা’। গয়া বেদে কাকুতি মিনতি করে। রাতের মধ্যেই এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। ক্রুদ্ধ মোড়ল মাইনক্যাকে বলে, ‘গ্রাম ছাইড়া যাবি? ক’ তো, ক’ তোরে মাইনক্যা—কি ঠিক কইরা রাইখ্যাছি আজ?
মাইনক্যা মোড়লের যথার্থ সহচর। সে বলে, ‘আজ রাইতে সমস্ত বাইদ্যার নাও ভাইঙ্গা চুরমার কইরা দিবেন, সমস্ত বাইদ্যার গলা কাইট্টা ফালাইবেন।’
গয়া বেদে বলে, ‘দোহাই দোহাই, মোড়ল সায়েব।’
মোড়লের সে দিক ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তার চামচা মাইনক্যাকে বলে, ‘এহনই কি, ক’ রে ক মাইনক্যা! আরও কি করবো আমি, আমার হুকুমডা কয়া দে।’
মাইনক্যা তো আসলে মোড়লের মাইক্রোফোন। সে বলে, ‘বাইদ্যা-নৌকার যত পুলাপান ছোট ছেলে আছে তাগো আছড়াইয়া মারবেন। সব বাইদ্যানীর মাথার চুল কাইটা বে-বস্ত্র কইরা দেশ থইনে খেদায়া দিবেন। আর সেই সোন্দর বাইদানীরে ধইরা রাখবেন।’
মাইনক্যার মুখে নিজের ক্ষমতার কথা শুনে বিগলিত মোড়ল বললো, ‘হুনছস বাইদ্যা! কি রকম পেরতাবডা আমার!’
এরপর আর কি। এই মাইনক্যার জন্য গ্রামে ঘনিয়ে আসে বিপদ। বেদেদের সহজ স্বাভাবিক ছান্দিক জীবনধারা তছনছ হয়ে যায়। আর নষ্ট হয়ে যায় চম্পার জীবন। কবি জসীম উদদীনের ‘বেদের মেয়ে’ পরিণত হয় এক হৃদয়ভাঙা ট্রাজেডিতে। এই ‘মাইনক্যা’দের সম্পর্কে বাংলা সাহিত্যের পাতায় পাতায় বার বার উচ্চারিত হয়েছে অভিশাপ। কারণ এরা হলো অকল্যাণ ও অমঙ্গলের প্রতীক।
তিন
একবার এক অযোগ্য শীতার্ত ইঁদুরকে এক দয়ালু মুনি রক্ষা করেছিলেন। ইঁদুর একদিন বললো, বিড়াল তাকে মারতে আসে। মুনির বরে ইঁদুর বিড়াল হয়ে গেল। এরপর কুকুরের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মুনির বরে বিড়াল থেকে কুকুর হয়ে গেল ইঁদুর। একদিন বললো বনের বাঘ তাকে খেতে আসে। মুনির বরে ইঁদুর কুকুর থেকে পরিণত হলো বাঘে। তারপর একদিন মুনির উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ব্যাঘ্ররূপী ইঁদুর। মুনি বললেন, আচ্ছা, তুই আবার ইঁদুর হয়ে যা। ইঁদুর আবার ইঁদুর হয়ে গেল।
আজকের দিনে আমরা, আমাদের শাসকরা যেসব বাঘ বানাই সেগুলোও সেই ইঁদুরের মতো তার স্রষ্টাকেই শেষ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। কারণ আজকালকার মুনিদের বাঘ থেকে ইঁদুরে পরিণত করার মতো সততা থাকে না।
যদিও শেষ পর্যন্ত দুষ্টু ছেলেটির মতো পরিণতি কারো কারো হয়। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুষ্টু ছেলেটি। পথচারী কেউ এলে আচমকা তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পেছন থেকে।
তারপর বিকৃত আনন্দে ফেটে পড়ে। একবার এভাবে আক্রান্ত এক পথচারী তাকে ১০টি টাকা উপহার দিয়ে বললো, খুব ভালো মারতে পার তুমি। তবে এখন যে লোকটি এখান দিয়ে যাবে তাকে যদি মারতে পার তাহলে সে তোমাকে ১০০ টাকা বকশিশ দেবে। টাকার লোভে ছেলেটি অপেক্ষা করতে লাগলো ঝোপের মধ্যে। কিছুক্ষণ পর সেই লোকটি এলো। ছেলেটি যথারীতি তার ওপর পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লাঠিপেটা করে হি হি করে হাসতে হাসতে বললো, এবার আমার ১০০ টাকা দাও।
ছেলেটির দুর্ভাগ্য, ওই লোকটি ছিল একজন বদরাগী পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুহূর্তের মধ্যে এই ছেলেটিকে পাকড়াও করে ফেললেন। তারপর লোকজন নিয়ে গোটা গ্রাম ঘেরাও করে ছেলেটির পিতামাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পেটালেন। সবাইকে বেঁধে নিয়ে চললেন, থানায়। কেন তারা এরকম বজ্জাত ছেলে জন্ম দিয়েছে? কেন তাকে আদব-কায়দা শেখায়নি?
কথায় বলে লোভে পাপ। পাপে হয় মৃত্যু। আর সীমা লঙ্ঘন না করার জন্য সব ধর্মেই বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
চার
কবি শেলীর স্ত্রী ছিলেন মেরী শেলী। কিন্তু কবি শেলীর স্ত্রী হিসেবে নয়, বিশ্ব সাহিত্যে তিনি অমর হয়ে আছেন তার বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন ফ্রাংকেনস্টাইনের জন্য। বৈজ্ঞানিক ফ্রাংকেনস্টাইন এক যন্ত্রদানব তৈরি করেছিলেন অন্যদের ওপর নিজের প্রভুত্ব বিস্তারের জন্য। দুঃখের বিষয়, এই দানবের হাতেই শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিয়ে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্য করতে হয়েছিল তাকে।
মেরী শেলীর ফ্রাংকেনস্টাইন আজ আর মাত্র একটি গ্রন্থ নয়। এটা একটা অসাধারণ দৃষ্টান্ত, অনন্যসাধারণ শিক্ষা হিসেবে অমর হয়ে আছে। আমাদের গ্রাম্য প্রবাদ, অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সে গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়—এটাই ফ্রাংকেনস্টাইনের মর্মবাণী। সেই বাণী থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা জ্ঞানী-গুণীরা বলে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা তা কখনোই শোনে না।
আমাদের মনে রাখা দরকার রাজা আর বানরের গল্পটি। দূরের পাহাড় থেকে প্রতিদিন একটি করে মোহর এনে দেয় বানর। রাজা মোহর হাতে নিয়েই বানরকে লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। বানর ব্যথা পেয়ে দূরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। প্রতিদিন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। উজির নাজিররা রাজাকে বললেন, এটা ঠিক না। এটা অন্যায়।
রাজা বললেন, ঠিক আছে। লাঠিপেটা বন্ধ। পরদিন বানর যথারীতি মোহর আনলো। রাজা বানরকে মারলেন না। বানর অভ্যাস মোতাবেক দূরে গিয়ে বসে রইল। পরদিন বানর মোহর দিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসে রইল। তারপর দিন বসলো রাজার কাছেই। তারপর দিন মোহর দিয়েই বানর গিয়ে বসলো রাজার ঘাড়ে। রাজা এবার উজির নাজিরদের ডেকে বললেন, বোঝা গেল বিষয়টা? কেন ওকে লাঠিপেটা করি। কেন এই নিয়ন্ত্রণটুকু দরকার?
এই অতি দরকারী জিনিসটা যদি আমাদের কর্তারা বুঝে থাকেন, তাহলে ভালো। না বুঝলেও ক্ষতি নেই। কারণ তাদের গাছের গোড়া মারাত্মকভাবে পচে গেছে। এই গাছ কাটার জন্য আর কোনো কাঠুরিয়ার দরকার হবে না। আপনাআপনি এটা ভূপতিত হবে। আমাদের মতো আমজনতার শুধু একটু অপেক্ষা করতে হবে—এই যা।
a_hyesikder@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন